যশোরের সন্তান নোবেল পুরস্কার কমিটির বিচারক বিজ্ঞানী নীল রতন ধর ,কেউ জানে না
যশোর শহরের ছেলে হয়ে ৩ বার নোবেল পুরস্কার কমিটির একজন বিচারক মনোনীত হয়েছিলেন । ভাবা যায়! যশোর শহরের ভেতর তার নামে একটি সড়ক আছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা কেউ তাকে চিনি না ।
যশোরের কৃতি সন্তান গুণীজন বিজ্ঞানী নীলরতন ধর । নীলরতন ধর নামে একটা রাস্তা আছে । এখনো অথচ এই মানুষটা কে আমরা চিনিও না জানিও না । এমন একজন গুণীকে আমরা চেনানোর চেষ্টা করিনা বরং ভুলে যাচ্ছি একটু একটু করে । তাকে জানলে বা জানালে যশোরবাসীই গৌরাবান্বিত হতে পারতো । অহংকারের পাঁচ পাঁচটি পালক তাকে ঘিরেই যুক্ত হতে পারতো যশোরের গৌরাবাঙ্গে । যশোরের ছেলে হয়ে তিন বার নোবেল পুরস্কার কমিটির একজন বিচারক মনোনীত হয়েছিলেন । ভাবা যায়!
ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রের পথিকৃৎ প্রখ্যাত বিজ্ঞানী নীলরতন ধর, ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ২রা জানুয়ারি যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা ছিলেন অ্যাডভোকেট প্রসন্ন কুমার ধর । ড. নীলরতন ধর পরিবারের ভ্রাতাগণ উকিল অমূল্য রতন ধর, রাজনীতিবিদ ডা: জীবন রতন ধর, ডা: দুর্গারতন ধর এম.আর.সি.পি সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ।
প্রখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক নীলরতন লেখাপড়া শুরু করেছিলেন যশোর জেলা স্কুলে । শিক্ষাজীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বস্তরেই প্রথম । এম.এস.সি-তে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড নম্বর পেয়ে কুড়িটি স্বর্ণপদক, গ্রিফিথ পুরস্কার ও এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত পুরস্কার লাভ করেন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে এম.এস.সি পড়ার সময়ে বিজ্ঞান জগতের দুইজন দিকপাল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র ও আচার্য জগদীশচন্দ্রের অধীনে গবেষণায় রত হন ।
১৯১৫ সালে স্টেট স্কলারশিপ পেয়ে বিলেত যান । ১৯১৭ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯১৯ সালে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি.এস.সি’ উপাধি লাভ করেন । ১৯১৯ সালে লণ্ডনে ফিরে আই.ই.এস নির্বাচিত হয়ে এলাহাবাদ ম্যুর সেন্ট্রাল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন । তাঁর গবেষণা জীবনের প্রথম কাজ ‘ইনডিউসড অ্যাণ্ড ফটো-কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন’ ।
শেষ জীবনেও তিনি নাইট্রোজেন ফিকশন নিয়ে গবেষণায় রত ছিলেন । তাঁর মৌলিক গবেষণাপত্রের সংখ্যা ছয়শতাধিক । ভৌত রসায়ন ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত । তিনি পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডক্টরেট এবং এস এ হিল ও জি হিল স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন । ১৯৩৮, ১৯৪৭ ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার কমিটিতে তিনি বিচারক ছিলেন । তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তাঁর নির্মিত ‘ইণ্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব স্পেশাল সায়েন্স’ এর বাড়িটি তাঁর প্রথম স্ত্রী বিজ্ঞানী সেইলা ধরের মৃত্যুর পর (১৯৪৯) এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর নামাঙ্কিত করে ।
তিনি অত্যন্ত মিতব্যয় জীবনযাপন করতেন । গবেষণার জন্য তিনি বহু লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন । তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪ লক্ষ টাকা আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামে অধ্যাপক পদ ও ১ লক্ষ টাকা আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামে লেকচারার পদ সৃষ্টির জন্য দিয়েছেন । চিত্তরঞ্জন সেবাসদনকে ১ লক্ষ টাকা এবং ৭ বছরের সম্পূর্ণ বেতন তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন । ভারত সরকার তাঁকে “পদ্মশ্রী” খেতাব দিতে চাইলে তিনি তা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন ।
তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হলো:
(১) আমাদের খাদ্য
(২) জমির উর্বরতা বৃদ্ধির উপায়
(৩) নিট কনসেপশন ইন বায়ো কেমিস্ট
(৪) ইনফ্লুয়েন্স অব লাইট ইন সাম বায়ো-কেমিক্যাল প্রসেস ইত্যাদি।
বিজ্ঞান জগতের এই দিকপাল মনীষী ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর তাঁর কর্মময় জীবনের অবসান ঘটান । (ঐতিহাসিক তথ্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে সংগৃহীত)
- সংগৃহীত (মানস চৌধুরী ,শিলং এর সৌজন্যে)
কোন মন্তব্য নেই