Header Ads

প্রদীপ দত্ত রায়ের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিধায়ক রামকৃষ্ণ ঘোষ শিশু সুলভ মন্তব্য করেছেন

 সংবাদদাতা , নওগাঁ:  ভাষা আন্দোলনে ব্রহ্মপুত্র  উপত্যকায় বসবাসকারী হিন্দু বাঙালির কোন মতামত নেওয়া হয় নি। হোজাই-র বিধায়ক রামকৃষ্ণ ঘোষ সম্প্রতি প্রদীপ দত্তরায়ের বিরোধিতা করতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, যা অত্যন্ত শিশুসুলভ ও অপরিপক্ক বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাঙালি নেতা চিত্তরঞ্জন পাল।
চিত্ত পাল বলেন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়  হিন্দু বাঙালির পীঠস্থান  রূপে পরিচিত হোজাই-র বিধায়ক যে একজন    মূর্খ, তা তিনি তাঁর বক্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কারণ, ১৯৬০ সালের ১৭ ও ১৮ই নভেম্বর তারিখে হোজাই শহরে এক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে ওই সভায় "নিখিল অসম বঙ্গ ভাষাভাষী সমন্বয় সমিতি" গঠন করা হয়েছিলো। সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে প্রায় আড়াই শ প্রতিনিধি অংশগ্ৰহণ করেছিলেন। নিম্ন অসমের ধুবড়ি থেকে কালীপদ ঘটক, বঙ্গাইগাঁও থেকে পূণ্য ঘোষ, লামডিং থেকে বিজন সিংহ সহ উজনি অসম থেকে অসংখ্য প্রতিনিধি অংশগ্ৰহণ করেছেন। সভায় সর্ব সন্মতি ক্রমে বরাকের প্রাক্তন সাংসদ জ্যোৎস্না চন্দ কে সভানেত্রী ও প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত কে "নিখিল অসম বঙ্গ ভাষাভাষী সমন্বয় সমিতি"- র সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছিলো। সম্ভবত এই সভায় অসমের রাজ্য ভাষা বাংলা করার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। ১৯৬১ সালের ৫ই জানুয়ারি এই সংগঠনের পক্ষ থেকে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর কাছে অসমের রাজ্য ভাষা বাংলা করতে দাবি জানানো হয়েছিলো।
প্রয়াত শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত প্রকৃতপক্ষে নগাঁও শহরের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। নগাঁও কলেজ ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার হয়েছিলো। যদিও নগাঁও কলেজ নির্মাণের জন্য তিনি ১৯৪৩ সালে ত্রিশ হাজার টাকা দান করেছিলেন। নগাঁও বাঙালি সন্মিলনীর উন্নয়নে পেছনে শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তের অবদান অনস্বীকাৰ্য। তাঁর সমকক্ষ নেতৃস্থানীয় তদানীন্তন যাঁরা অভিজাত বাঙালি ছিলেন, তাঁরা হলেন, সত্যব্রত মজুমদার, ডাঃ অজিত কুমার দাস, অধ্যাপক কামাখ্যা কমল পণ্ডিত, অধ্যাপক মনমোহন দাস, অধ্যাপক ফণী দত্ত। গুয়াহাটি হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট নীরেন লাহিড়ীও এই টীমে ছিলেন। অবিভক্ত নগাঁও জেলার হোজাই মহকুমায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু বাঙালিদের নানা সমস্যা সৃষ্টি হলে তাঁরা আইনগত সুরক্ষা দিয়ে থাকতে। প্রয়াত শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত অত্যন্ত উচ্চ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান নেতা ছিলেন।
চিত্ত পাল আরও বলেন, হোজাই শহরে "এলবার্ট ক্লাব " ছিলো। শোনামতে, ওই ক্লাবের সভাপতি পদে নগাঁওয়ের ডাঃ অজিত কুমার দাস বহুদিন ছিলেন। ১৯৭২ সালের এর "শিক্ষার মাধ্যম" আন্দোলনে ছাত্র নেতা শহিদ অনিল বরা তিনটি বাস ভর্তি সমর্থক নিয়ে হোজাই শহরে গিয়েছিলেন। হোজাই-র এলবার্ট ক্লাবের সদস্যরাই আসু নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতি রোধ গড়ে তুলেছিলেন বলে জানা গেছে। রামকৃষ্ণ ঘোষ হোজাই কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে যে মূর্খেরা মতো আবোল তাবোল বলছেন, এই হোজাই বিধানসভা কেন্দ্রটি শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে ১৯৫৯ সালে গঠিত হয়েছে। শহিদ অনিল বরা কে হোজাই শহরে হত্যা করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিলো, তার প্রেক্ষিতে ডিএসপি হিরণ্য কুমার ভট্টাচাৰ্যের নেতৃত্বে পুলিশের বিশাল দল হোজাই-র যুবকের দীর্ঘ দিন ধরে অমানুষিক অত্যাচারে করা হয়েছিলো। বাহাত্তরের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পর বলরাজ তীরখাঁ-র নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়েছিলো। শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত এই আইনী লড়াইয়ের সমস্ত খরচ বহন করেছিলেন।
অসমে রাজ্য ভাষা বাংলা করতে দাবি জানানোর পর শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তের নগাঁও শহরের বেঙ্গল পট্টির  বাড়িতে উগ্র অসমিয়া জাতীয়তাবাদী নেতারা আক্রমণ করার জন্য তিনি এক রাতের মধ্যে বাড়ি বিক্রি করে হোজাই চলে যান। আমরা নগাঁও ও হোজাই-র বাঙালিরা তাঁকে মনে রাখি নি। মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, বিধায়ক রামকৃষ্ণ ঘোষ ও প্রাক্তন বিধায়ক শিলাদিত্য দেব প্রমুখেরা তাঁদের ব্যাক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হিন্দু বাঙালিদের আসন্ন আদমসুমাড়িতে অসমিয়া মাতৃভাষা পরিচয় দিতে বাধ্য করাবে। এটাই মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্তবিশ্ব শর্মার গৌপন এজেণ্ডা বলে অভিহিত করেছেন চিত্তরঞ্জন পাল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.