Header Ads

ভিন রাজ্যে ক্ষমতা দখল তৃণমূলের অলীক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না

বিশ্ব দেব  চট্টোপাধ্যায়  ,নেতা-নেত্রীদের সংসদে 
পাঠিয়ে আম ও ছালা দুই-ই যাবে তৃণমূলের !!
এখানে আম বলতে সংসদীয় আসন এবং ছালা বলতে ভিনরাজ্যে ক্ষমতায় বসার অলীক স্বপ্নকেই বুঝতে হবে। তৃণমূল মাঝে মাঝেই অদ্ভূত ধরণের রাজনৈতিক মেধার দাপট দেখানোর নেশায় ভিনরাজ্যের বাতিল অপ্রাসঙ্গিক নেতা-নেত্রীদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সংসদীয় আসন ভেট দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে সংশ্লিষ্ট ভিনরাজ্যে তারা কেল্লা ফতে করে ফেলবে--কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল আজ পর্যন্ত তেমন কোনো ঘটনা ঘটে নি। অদূর ভবিষ্যতেও তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কেন দেখা যাচ্ছে না সে কথায় পরে আসছি।  
তৃণমূল কংগ্রেস একের পর এক ভিন রাজ্যের নেতাকে বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে--কিন্তু কেন পাঠাচ্ছে? শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেবের পর এবার তারা রাজ্যসভায় পাঠাচ্ছে গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরোকে। তিনি অর্পিতা ঘোষের ছেড়ে যাওয়া আসনে প্রার্থী হচ্ছেন তৃণমূলের। তৃণমূল যে ভিনরা্জ্যে থেকে সাংসদ করে পাঠাচ্ছে, তাতে কি বাস্তবেই কোনও ফায়দা তোলা সম্ভব হবে সেই রাজ্যের নির্বাচনে?
বাংলার নির্বাচনে বিপুল জয় পাওয়ার পর তৃণমূল নজর দিয়েছিল ভিনরাজ্যে তাদের সংগঠন জোরদার করতে। সেইমতো ভিনরাজ্যে সংগঠন বিস্তার করতে গুরুত্বের আসনে বসানো হচ্ছে কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে আসা সংশ্লিষ্ট দল ও রাজ্যে অপ্রাসঙ্গিক বতিল হয়ে যাওয়া নেতা-নেত্রীদের। ত্রিপুরায় যেমন অসমের নেত্রী সুস্মিতা দেবকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল, তেমনই গোয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরোকে বেছে নিয়েছে বাংলার ক্ষমতাসীন দল।
সুস্মিতা দেব ছিলেন কংগ্রেসের মহিলা সভানেত্রী--যাঁর পিছনে ছিল তাঁরই পিতার বিরাট মাপের রাজনৈতিক কাট-আউট। তাঁকে ভাঙিয়ে এনে ত্রিপুরার দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল। মূলত অসমের নেত্রী সুস্মিতা দেব  শিলচরের (আসাম) বড় মাপের কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেবের কন্যা। সন্তোষমোহন দেব অসমের পাশাপাশি ত্রিপুরাতেই কাজ করেছেন কংগ্রেসের হয়ে। তখন মেয়ে সুস্মিতা দেবও বাবার সঙ্গে সংগঠনের কাজে সামিল ছিলেন--কিন্তু সন্তোষমোহন দেব বামফ্রন্ট তথা সিপিএমকে খুব বেশি বিব্রত করতে পারেন নি। তবু সেই সূত্রেই সুস্মিতা দেবকে ত্রিপুরার দায়িত্ব দিল তৃণমূল। তাঁকে গুরুত্বশালী করতে বাংলা থেকে রাজ্যসভার সাংসদ করে পাঠানো হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী হিসেবে তাঁর নিজের কেন্দ্রেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে জেতার মতো পরিস্থিতিতে তিনি ছিলেন না। তাই রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্যেই তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে আগামী পাঁচ বছরের জন্যে নিজেকে সুরক্ষিত রাখলেন। তাঁর যোগদানে আসামে অথবা ত্রিপুরাতে তৃণমূলের ছালার অস্তিত্ব মাথাচাড়া দিতে পারে কিনা সেটাই এখন  দেখার !
মানস ভুইঁয়ার জায়গায় সুস্মিতা দেব রাজ্যসভায় গেলেন তৃণমূলের টিকিটে। তৃণমূল তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব আসনে দেওয়ায় তিনি বিপুল উৎসাহ নিয়ে ত্রিপুরার সংগঠনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। রাজ্যসভায় তৃণমূলের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি ত্রিপুরার হয়ে গলা ফাটাবেন বলেও জানিয়েছেন। 
এরপর অর্পিতা ঘোষের ছেড়ে আসা রাজ্যসভার আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নিচ্ছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরোকে ! ফেলেইরোকে গোয়া তৃণমূলের মুখ করতে চাইছেন মমতা--তাই তাঁকে নাকি রাজ্যসভায় পাঠিয়ে তাঁর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে নিতে চাইছেন ! যাতে বাংলার পাশাপাশি (বাংলার কি কথা তিনি বলবেন তা তিনিই জানেন--তৈরি স্ক্রিপ্ট হতে পেয়েও তিনি ঠিক মতো পড়তে পারবেন কি না তাও বলা কঠিন) তিনি গোয়ার কথাও তৃণমূলের হয়ে তুলে ধরতে পারেন সংসদে, তার জন্যই তৃণমূলের পক্ষে তাঁকে পাঠানো হচ্ছে সংসদে !
কিন্তু প্রশ্ন হল--এই নীতিতে কি ভিনরাজ্যে সাফল্য আসবে তৃণমূলের? নাকি ভিনরাজ্যে শুধুমাত্র নিজের নাক কেটে কংগ্রেসের যাত্রা ভঙ্গ করবে তৃণমূল, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তৃণমূল আবার জানিয়েছে, গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যসভায় পাঠানো হলেও তাঁকে গোয়াতেও প্রার্থী করা হবে। ফলে গোয়ার নির্বাচনে যদি তিনি জেতেন তাঁকে রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করিয়ে গোয়ার দায়িত্ব দেওয়া হবে ! এই অসাধরণ তৃণমূলীয় রাজনৈতিক মেধা থেকে এটা স্পষ্ট হল যে কংগ্রেসে অপ্রাসঙ্গিক জনগ্রহণযোগ্যতা হারানো এই লুইজিনহো ফেলেইরোর ওপর ভরসা রেখে গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে দলের প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরার ঝুঁকি তৃণমূল নিতে পারছে না। 
আপাতত তৃণমূল গোয়া বা ত্রিপুরাকে গুরুত্ব দিতে সুস্মিতা দেব বা লুইজিনহো ফেলেইরোকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। মোট কথা, তৃণমূলের লক্ষ্য যে করেই হোক ভিনরাজ্যে দাঁত ফোটানো। তারা কতটা সফল হবে এই লক্ষ্যে তা বলবে ভবিষ্যৎ। আপাতত তৃণমূল তাদের 'খেলা হবে' কর্মসূচী এ ভাবেই চালিয়ে যেতে চাইছে গোয়া বা ত্রিপুরায় !
আগামী বছরের শুরুতেই যে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন--সেই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে একাধিক জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলের কোনও শক্তি না থাকলেও, তারা নির্বাচনে জেতার চ্যালেঞ্জ ছুড়েঁ দিয়েছে। এ ব্যাপারে এই রাজ্যগুলির মধ্যে গোয়া ও মনিপুর  বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যদিও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় গোয়ায় ফের বিজেপি ফিরতে চলেছে বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত করা হচ্ছে।
যে পাঁচ রাজ্যে ভোট হতে চলেছে, তার মধ্যে রয়েছে উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মনিপুর। এই রাজ্যগুলির মধ্যে এর আগে মনিপুরে তৃণমূলের বিধায়ক থাকলেও পরবর্তী সময়ে বিজেপিতে তাদের যোগদানের ফলে, মনিপুর তৃণমূল শূন্য হয়ে যায়। অন্যদিকে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে গোয়ায় সাতবারের বিধায়ক ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও গোয়া ঘুরে এসেছেন। তাঁর গোয়া সফরের সময়ে প্রাক্তন টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ এবং প্রাক্তন অভিনেত্রী নাফিসা আলি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এই দুজনেরই নামের ওজন থাকলেও বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা নেই। গোয়া এমনই একটা রাজ্য যেখানে অরাজনৈতিক তারকাদের নিজস্ব আলোর কোনো দাম নেই ভোটের রাজনীতিতে। ফলে এই দুই তারকা নির্ভরতা তৃণমূলকে বিশেষ কিছু দিতে পারবে বলে আমার অন্তত মনে হয় না।
বর্তমানে গোয়ার শাসকদল বিজেপি। একাধিক সমীক্ষা অনুযায়ী, তারাই গোয়ায় ক্ষমতা ধরে রাখতে চলেছে। প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখাগিয়েছে ৪০ আসন বিশিষ্ট গোয়া বিধায়নসভায় বিজেপি ২০ থেকে ২৫ টি আসন জিততে পারে। কংগ্রেস জিততে পারে ২ থেকে ৫ টি আসন। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি জিততে পারে ৩ থেকে ৫ টি আসন। অন্যরা জিততে পারে গোটা পাঁচেক আসন। তৃণমূলকে সমীক্ষকরা এই অন্যান্যদের মধ্যে রাখছেন !
বিজেপি পেতে পারে কমবেশি ৩৮ শতাংশ ভোট। ২০১৭-তে যা ছিল ৩২.৫ শতাংশের মতো। তাদের প্রাপ্ত ভোট শতাংশ ৫.৫ শতাংশ মতো বৃদ্ধি পাবে বলে সমীক্ষকদের ধারণা। আপ পেতে পারে ২৪ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস পেতে পারে ২০ শতাংশ ভোট। অন্যরা পেতে পারে ১৮ শতাংশ ভোট। এখানে তৃণমূলের জন্য আলাদা করে কিছু বলা-ই হয়নি। উল্লেখযোগ্য হল, প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্করের মৃত্যুর পরে বিজেপি সেখানে প্রথমবারের জন্য নির্বাচনে লড়াই করতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বিজেপিকে সেখানে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে আম আদমি পার্টি এবং তাদের বেশ কিছুটা পেছনে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস--জনমত সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী !
প্রাথমিক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী মনিপুরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও, সেখানে ফের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে বিজেপি। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৬০ আসনের বিধানসভায় বিজেপি ২৫ থেকে ৩০ টি আসন পেতে পারে। কংগ্রেস পেতে পারে ১৫-১৮ টি আসন। নাগা পিপলস ফ্রন্ট পেতে পারে ৪-৬ টি আসন। অন্যরা পেতে পারে ৪-৬ টি আসন। এখানেও অন্যদের তালিকায় রাখা হয়েছে তৃণমূলকে। 
এখানে বিজেপি পেতে পারে ৩৯ শতাংশ ভোট। এক্ষেত্রে ২০১৭ সালের তুলনায় তাদের ভোট বাড়তে পারে কমবেশি ৩ শতাংশ। তবে কংগ্রেসের ভোট এবার কমতে চলেছে। ২০১৭-তে কংগ্রেসের ভোট ৩৫.১ শতাংশ থেকে ২০২২-এ ৩০ শতাংশ হতে চলেছে বলে সমীক্ষায় বলা হচ্ছে।
অর্থাৎ গোয়া এবং মনিপুরে কংগ্রেসকে দুর্বল করার পরিকল্পনা অনেকটাই সফল হতে চলেছে বিজেপি। তৃণমূলের আম-ছালা'র মূল্যে কংগ্রেসের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতায় বিজেপি থাবা বসাতে সক্ষম হচ্ছে। ভিনরাজ্যের মূলতঃ কংগ্রেসের বাতিল নেতাদের ভাঙিয়ে এনে তৃণমূল রাজ্যসভার আসন যেভাবে ভেট দিয়ে চলেছে তাতে ভিনরাজ্যে ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের কথা রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও খুব বেশি তৈরি করতে পারবে না। ফলে এ রাজ্যের তৃণমূলের মাঠেময়দানে লড়াই করতে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের বঞ্চিত করে ভিনরাজ্যের নেতাদের সংসদে পাঠানোর রাজনীতিতে মোটেও আহ্লাদিত হচ্ছেন না। হতাশা তৈরি হচ্ছে এইসব নেতাদের মধ্যে। বাড়া ভাতে ছাই ফেলার এই রাজনীতি সকলেই ভালভাবে নিচ্ছেন না। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পর বিষযটা স্পষ্ট হবে অবশ্যই !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.