Header Ads

আগরতলা তে রঙিন মাছ নিয়ে কর্মশালা চলছে





 সুদীপ চন্দ্র নাথ ,আগরতলা: ত্রিপুরা রাজ্যের নদীনালা পুকুর জলাশয়ে স্থানীয় প্রজাতির বহু রঙিন মাছ রয়েছে। এই মাছ গুলিকে কি করে একুরিয়ামে এবং ছোট জায়গায় চাষ করে বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়া যায় এই সংক্রান্ত বিষয়কে সামনে রেখে রঙিন মাছের প্রজনন এবং চাষ বিষয়ক এক বিশেষ কর্মশালা শুরু হয়েছে আগরতলার লেম্বোছড়া এলাকায়। ত্রিপুরা সরকারের মৎস্য দপ্তরের মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের কনফারেন্স হলে বৃহস্পতিবার তিন দিন ব্যাপি এই কর্মশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য দপ্তরের মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, নৈনিতালের ঠান্ডা জলের মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের অধিকর্তা প্রমোদ কুমার পান্ডে, ত্রিপুরা সরকারের মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তা ডি কে চাকমা, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিষ্ট ড অমিত পান্ডে, ড রাধেশ্যাম হালদার, অভয় কুমার গিরি, ডা প্রজ্ঞান দাশ প্রমুখ।ষইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচার রিসার্চ'র(আই সি এর) অন্তর্গত উত্তরাখন্ড রাজ্যের নৈনিতালের ঠান্ডাজলের মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের উদ্যোগে এবং ত্রিপুরা সরকারের মৎস্য দপ্তরের সহযোগিতায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনদিন ব্যাপি এই কর্মশালা শনিবার পর্যন্ত চলবে। রঙ্গিন মাছ চাষ বিষয়ক একটি গাইড বুকের আনুষ্ঠানিক আবরণ উন্মোচন করেন অতিথিরা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নিতে আসা লোকদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী একুরিয়াম তৈরি সামগ্রী তুলে দেন তারা। 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী মেভার কুমার জমাতিয়া বলেন - রাজ্যের চাহিদার একটা অংশ আমদানি করতে হয়। তবে এই মাছের ঘাটতি পূরণ করার জন্য রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। চাইলে এই চাহিদা রাজ্য থেকেই পূরণ করা সম্ভব। কারণ রাজ্যে যে পরিমাণ মাছের চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য ১০বছর আগে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্প অনুসারে পাহাড়ের নিচে অংশে চেক ড্যাম তৈরি করে সেখানে বৃষ্টির জলের সময় ধরে রাখা হয়। এই জলের মধ্যে মাছ চাষ করা সম্ভব কিন্তু আগে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমান সরকার এই জলা জায়গাগুলিতে মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। স্ব সহায়ক দল গঠন করে এই চেক ড্যামের জলেতে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা হবে। সেইসঙ্গে মন্ত্রী আরো বলেন ত্রিপুরা রাজ্যে অনেক ধরনের দেশীয় প্রজাতির রঙ্গিন মাছ রয়েছে। এই মাছগুলিকে প্রাকৃতিক খাল-বিল থেকে সংগ্রহ করে কৃত্রিম ভাবে চাষের ব্যবস্থা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে এই মাছগুলো দেশ-বিদেশে বিক্রি করে মানুষ আর্থিক ভাবে সম্ভব হতে পারে। রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়গুলিতে আগ্রহ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে মন্ত্রী আরো বলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। তিনি ত্রিপুরাবাসীর জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা করেছেন এই প্রকল্পগুলিকে ভিত্তি করে রাজ্যবাসীকে উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

নৈনিতালের ঠান্ডা জলের মৎস্য গবেষনা কেন্দ্রের অধিকর্তা প্রমোদ কুমার পান্ডে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন ভারতে দেশীয় প্রজাতির রঙ্গিন মাছের বিপুল ভান্ডার রয়েছে। এই রঙিন মাছ গুলির প্রায় ৮৫শতাংশ উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে এমন অনেক প্রজাতির রঙ্গিন মাছ রয়েছে যার একেকটি ৫ লক্ষ টাকা আন্তর্জাতিক বাজারে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ এই বিষয়ে অবগত নন। তার সংস্থা সাধারণ মানুষকে এই বিষয়গুলোতে সচেতন করার বিষয়ে আগ্রহী। এতে করে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। যেভাবে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে এর ফলে আগামী দিনে বিদেশে রঙ্গিন মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে এই রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। 

ত্রিপুরা সরকারের মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তা ডি কে চাকমা বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন দপ্তর রাজ্যে পাওয়া যায় এমন দেশীয় প্রজাতির মাছ সংগ্রহ এবং প্রজননের বিষয়ে আগ্রহী। এইজন্য মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন মৎস্যচাষী এবং জেলেদেরকে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। যাতে করে জেলেরা এই মাছ গুলির গুরুত্ব বুঝে জীবন্ত অবস্থায় দত্ত এবং সংরক্ষণ করতে পারে। পরবর্তী সময় মৎস্য দপ্তর জেলেদের কাছ থেকে এই মাছগুলো বাজারে যে দামে বিক্রি হয় তার চেয়ে একটু বেশি দামে কিনে প্রতিপালন করবে। এর দুটি সুবিধা রয়েছে একদিকে জেলেরা বেশি দামে মাছ বিক্রি করতে পারে মাছ ধরার বিষয়ে আগ্রহী হবে এবং মৎস্য দপ্তর মাছ গুলির বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রয়োজন করে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে। সেই সঙ্গে তিনি আরো বলেন রঙিন মাছ চাষের বিষয়ে যে প্রশিক্ষণ এখানে দেওয়া হচ্ছে তাতে করে চাষীরা আরো বেশি জানতে পারবেন এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগে খুব সহজে রঙ্গিন মাছ চাষ করতে পারবেন এমন কি নতুন নতুন সৃষ্টি করতে পারবেন সংকরায়ন ঘটিয়ে। এই কর্মশালায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ২০জন মৎস্য চাষি প্রশিক্ষনের জন্য এসেছেন। তাদেরকে আলোচনার মাধ্যমে এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.