চাষি ভাই বোনদের নিয়ে যৌথ আন্দোলনের ডাক
আবুল কালাম বাহার ,শিলচর, গত ১৯ শে নভেম্বর ২০২১ , গুরু নানকের জন্মদিবসের প্রাক্কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেপ্টেম্বর ২০২০ তে আনা ৩ টি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা করলেন । সেই ঘোষণাকে স্বাগত জানাল আমরা বাঙালী ও বাঙালী ছাত্র-যুব সমাজ। বিরোধী শূন্য ভাবে পাশ করিয়ে নেওয়া ৩ টি কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে পাঞ্জাবি কৃষকদের নেতৃত্বে ভারতের বহু অঞ্চলের কৃষকরা দিল্লীতে প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান বিক্ষোভ করেছে । সেই আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন বিরোধী দলের ন্যায় আমরা বাঙালী ও বাঙালী ছাত্র যুব সমাজ সংগঠন পথে নেমেছে , আন্দোলন করেছে , নয়া কৃষি আইনের প্রতিলিপি জ্বালিয়ে গণজাগরণ ঘটিয়েছে ।
'আমরা বাঙালী' অসম রাজ্য কমিটির সচিব সাধন পুরকায়স্থ বলেন, গত ১৯ তারিখ সকাল বেলা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার মধ্যে দিয়ে কৃষকদের জয় ঘোষিত হল । ওই আইন লাগু হলে সমস্ত কৃষিজ সম্পদ বৃহৎ পুঁজিপতিদের কুক্ষিগত হয়ে যেত , কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বেঁচার সময় বৃহৎ কর্পোরেটের সঙ্গে দরদামে পেরে উঠত না , মজুতের ঊর্ধসীমা তুলে পুঁজিপতিরা কৃত্রিম চাহিদা তৈরী করে , চড়া দামে তা বাজারে বিক্রি করার সম্ভাবনা ছিল, ইত্যাদি রকম ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরী হত ।তার বিরুদ্ধে কৃষকরা আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় ৭০০ র বেশি কৃষক আন্দোলনে শহীদ হয়েছে । তাদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবী জানান তিনি । এছাড়া ও তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখে বারবার এক দেশ এক দেশ বলতে শোনা যায়,কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় ফসলের দামে অন্য রাজ্যের থেকে অসমে বেশ কিছু অত্যাবশক ফসলেল দাম দ্বিগুন । অবিলম্বে সমগ্র দেশজুড়ে বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যক পণ্য ,ফসল ইত্যাদির দাম যেন মোটামুটি কম-বেশী এক থাকে ।
এদিকে 'বাঙালী ছাত্র যুব সমাজে'র কেন্দ্রীয় সচিব তপোময় বিশ্বাস বলেন, ৩ কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে আন্দোলনরত শহীদ কৃষকদের আমার বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি । ১৯ তারিখ এক পবিত্র দিনে গুরু নানকের জন্মদিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজীর ৩টে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে দাম্ভিকের পরাজয় গণতন্ত্রের জয় সুনিশ্চিত হল । তবে আমরা মনে করছি সামনে পঞ্জাব-উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা । পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটে, উপনির্বাচনে ভরাডুবি , ইউ-পি তে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির পরাজয় এই সব কথা ভেবে এবং ২০২৪ এ মোদীজী তাঁর প্রধানমন্ত্রীর কুরশি বাঁচাতেই এই ঘোষণা । তাই আমরা বলছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পার্লামেন্টে এই আইন বাতিল করা হবে ততদিন আন্দোলন চলবেই। পাশাপাশি যে কথা আমরা আগেও বলেছি,এখনো বলছি এই ৩ টে কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেই কৃষকদের দূর্দশা ঘুচবে না , মূলত ক্ষুদ্র কৃষকদের তো নয়ই । তাদের ফসল দালালদের কাছে ফসল উৎপাদন খরচেরও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে, ফসল স্বরূপ প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন ক্ষুদ্র চাষী আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিচ্ছেন । কৃষিতে এসব দালল/ফঁড়ে রাজ বন্ধ করতে অবিলম্বে কৃষকদের নিয়ে উৎপাদক ও উপভোক্তা সমবায় গঠন করতে হবে । এর মাধ্যমেই চাষী ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে । কৃষিজ পণ্যের দাম ঠিক করতে যেভাবে একটি শিল্প পণ্যের দাম তার কাঁচামাল, শ্রমিকের মুজুরি,ঋনের সুদ,সংরক্ষণের মূল্য,উৎপাদন হার লাভের পরিমাণ ইত্যাদির কথা ভেবেই নির্ধারণ হয় , ঠিক একই ভাবে কৃষিজ পণ্যের ক্ষেত্রেও তাই হবে । এর জন্য কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে । এর মধ্যে দিয়েই কৃষকদের সব সমস্যার সমাধান হবে । এই দাবী বাস্তবায়নের জন্য সকল চাষী ভাই-বোনদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলছে চলবে ।
কোন মন্তব্য নেই