রামকৃষ্ণের অস্থি নিয়ে শোভা যাত্রা এক অনন্য অভিজ্ঞতা
শ্রী রামকৃষ্ণের অস্থি নিয়ে এক শোভা যাত্রা চলেছে সিমলা পাড়া থেকে কাকুরগাছি রামচন্দ্র দত্তর বাগানবাড়িতে। কলকাতা শহর এমন শোভাযাত্রা কোনো কালে দেখেনি। একজন সাধুর অস্থি নিয়ে তাঁর গৃহী ভক্তরা চলেছেন। কেউ সেই শোভাযাত্রাতে যোগ দিতে কোনো আমন্ত্রণ জানায় নি, পুরোটাই অন্তরের টান।
সেই আনন্দ মিছিলে আছেন ব্রাহ্ম সমাজের নেতৃবৃন্দ, সুফি সাধকগণ, বঙ্গ রঙ্গ মঞ্চের নট নটী রা, গিরিশ ঘোষ, অমৃতলাল বসু আবার বিনোদিনী, তিন কড়ি। আছেন পাদ্রীরা। যোগ দিয়েছেন বহু বার বনিতা। তাঁদের প্রানের ঠাকুর চলে গেছেন, তাঁদের তো আসতেই হবে। The Statesman কাগজে এই শোভাযাত্রার বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছিল অনেকটা জায়গা জুড়ে। Statesman লিখেছিল He inaugurated a spiritual movement in Bengal এক আধ্যাত্মিক আন্দোলনের নেতা রামকৃষ্ণ।
Chirstopher Isherwood স্বামী গম্ভীরানন্দের History of Ramakrishna Math and Mission এর ভূমিকাতে লেখেন Ramakrishna movement is the most important of all the existing religious movements of our time, no matter how important or large or venerable the others may be.
হুগলী র ভাষাতে কথা বলা সহজ , সরল অথচ অতি বুদ্ধিমান ও সংবেদনশীল মানুষটি কলকাতাকে দেখছেন। কলকাতা পরাধীন ভারতের রাজধানী। গঙ্গার তীরে সাহেবরা নগরের পত্তন করেছেন। The second city after London. এই শহরের শিক্ষিত, ধনীদের চাল চলন ই আলাদা, ভারতবর্ষের অন্য কোন শহরের সাথে মিলে না। এখানে রামকৃষ্ণর জীবিত কালেই পরিশ্রুত পানীয় জলের এবং underground sewer system এর ব্যবস্থা করেছে কলকাতা পুরসভা। ঠাকুরের জন্মের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হিন্দু কলেজ যা পরে প্রেসিডেন্সি কলেজ নামে বিখ্যাত। তৈরি হয়েছে ভারতের প্রথম মেডিক্যাল কলেজ, নাট্যশালা, মেয়েদের স্কুল। ঠাকুর দেখলেন একদিকে হত দরিদ্র মানুষ, অন্য দিকে শিক্ষিত জনেদের বিরাট অংশ পোকার মত কিলবিল করে বেড়াচ্ছে। মিশলেন সকলের সাথে, কেশব সেন, দেবেন ঠাকুর, শিবনাথ শাস্ত্রী, বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, জোসেফ কুক। গিরিশ চন্দ্রের মাধ্যমে বন্ধু হয়ে উঠলেন বাংলার অভিনেতা, অভিনেত্রীদের কাছে। নাটক দেখতে গেলেন, চিড়িয়াখানায় গেলেন, সার্কাস দেখলেন আবার গঙ্গা দিয়ে জাহাজ, স্টিমার যাচ্ছে তাও দেখলেন।
তিনি মানুষের দুটো সমস্যা দেখলেন। এদেশে একদল লোক খেতে পায়ে না, আর অন্যদল অনুকরণ করতে করতে তার অতীত, ঐতিহ্য কে ভুলতে বসেছে। অন্যদিকে বিদেশে মানুষকে যন্ত্রে রূপান্তরিত করার খেলা চলছে। যন্ত্রের প্রাধান্য মানুষের চেয়ে বেশী।
তিনি ডাক দিলেন কলকাতার দিকে মুখ করে , ওরে তোরা কে কোথায় আছিস চলে আয়ে। সেই ডাক কি না শুনে থাকা যায়? এলেন চাকুরিজীবি কিছু মানুষ, তার মধ্যে ডেপুটি , ইংরেজি অফিসে চাকুরী করা মানুষ। এলেন যুবকের দল, এদের ওপর সবচেয়ে বেশী ভরসা তাঁর। এলেন স্কুল মাস্টার। সবাইকে নিয়ে শ্রী রামকৃষ্ণের বিশাল সংসার।
তিনি বুঝলেন গোটা পৃথিবীকে ধ্বংশের হাত থেকে বাঁচাতে পারে বেদান্ত দর্শন, যা মানুষের অনন্ত শক্তিতে বিশ্বাস করে। নরেন্দ্রনাথএর মধ্যে দিয়ে প্রচার করলেন শিব জ্ঞানে জীব সেবা। শোনালেন সেই মন্ত্র যদি জন্মেছ একটা দাগ কেটে যাও, ভালোবাসা, সেবার মধ্যে দিয়েই সেই দাগ কাটা যায়। ঈশ্বর জ্ঞানে মানব সেবা। আমার পাপী নারায়ণ, তাপী নারায়ণ, গুন্ডা, বদমায়েশ, লুচ্চা নারায়ণ।
বিদেশে বিবেকানন্দ শোনালেন দুটি নতুন কথা, universal individuality আর universal religion. নতুন কথা।নড়ে চড়ে বসল আমেরিকার শিক্ষিত সমাজ। স্বামীজী ঠাকুরের সমন্বয়ের বার্তা শোনালেন Help and not Fight, Assimilation and not Destruction, Harmony and Peace and not Dissension.
রোল্যা বললেন two persons have drawn my respect because they with incomparable charm and power have realised the splendid symphony of the universal soul, they are Ramakrishna and Vivekananda.
স্বামীজী Sages of India বকতৃতা তে এবং পরে কলকাতার বক্তৃতায় বললেন all that have been life giving, strengthening, pure and holy has been his words, his inspiration, he himself. যা কিছু প্রেরণা দায়ক স ব তাঁর, তিনি স্বয়ং।
16 আগস্ট, 1886 চলে গেলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। রেখে গেলেন মানুষ সম্বন্ধে তাঁর মহা মূল্যবান ধারণা।
_বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক aristotle বললেন_ *Man is a political animal,* _Karl Marx বললেন_ *Man is an economic animal,* _Freud বললেন_ *Man is a pleasure seeking animal,* _সবাই বললেন মানুষ পশুই তবে উন্নত তর পশু।_
_রামকৃষ্ণ বললেন -_
*Man is God, মানুষ দেবতা।*
_এর পরে আর কোনো কথা চলে না।_
🙏🙏🙏সংগ্রহ করা
কোন মন্তব্য নেই