বরাকে সিন্ডিকেটরাজের চালানোর পেছনে রাঘব বোয়াল-গ্রেফতারের দাবি বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের
সংবাদদাতা, শিলচর : আসামের মূখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি বরাকের অবৈধ ড্রাগস ব্যাবসা ও সিন্ডিকেট রাজ নিয়ে মুখ খুলেছেন এবং এসবের অবসানকল্পে ইতিমধ্যে চেকিং সহ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছেন। তার এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানালেও কিছু সঙ্গত এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মুখ খুললেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর কর্মকর্তারা।
ফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে আহুত এক সভায় এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিডিএফ এর মূখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে অবৈধ ড্রাগস এবং সিন্ডিকেট ব্যাবসার জন্য বরাকের যুবপ্রজন্মের এক বড় অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটি তাই বরাকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন যে যারা ড্রাগস পাচার করে লক্ষ লক্ষ যুবকের সর্বনাশ করছেন তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু এইসব ড্রাগসের পরিবহন এবং বিপনন হয় মায়ানমার বা বার্মা থেকে এবং এর পিছনে একটি আন্তর্জাতিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন এই পরিবহন চক্রকে ভেঙে দিতে না পারলে স্থানীয় স্তরে কিছু দোষীদের ধরপাকড় করে কখনোই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।তার বক্তব্য দরকার হলে মূখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য নিয়ে এই সমস্যার মূলে আঘাত হানতে হবে। অন্যথা সবটাই 'ভষ্মে ঘি ঢালা 'হবে।
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে প্রদীপ বাবু বলেন যে তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে এবং বিডিএফ এর পক্ষ থেকে গত দু'বছর ধরে এই সিন্ডিকেট রাজের বিরুদ্ধে তাঁরা সরব রয়েছেন। তিনি বলেন কয়লা ,সুপারি বালি পাথর,পোস্ত সহ আরো চলতে থাকা বিভিন্ন সিন্ডিকেট ব্যাবসার পিছনে যে লম্বা হাত রয়েছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । তিনি আরো বলেন যে কিছুদিন আগে মেঘালয়ের লোকায়ুক্ত কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে বরাকের কয়লার সিন্ডিকেটের ব্যাপারে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন এবং তাতে বর্তমান জনৈক বিধায়ক, সাংসদ এবং দলীয় পদাধিকারীর জবানবন্দি নেবার ব্যাপারেও সুপারিশও করেন। কিন্তু এই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হবার পরই কোনো রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যায়।বিডিএফ মূখ্য আহ্বায়ক বলেন যে আমার ধারণা যেসব রাঘব বোয়ালদের মদতে এই সিন্ডিকেট ব্যাবসা চলছে তাদের বিশদ মূখ্যমন্ত্রীর অজানা নয়। তাই তিনি যদি সত্যিই এর অবসানকল্পে আন্তরিক হোন তবে চুনোপুটিদের শাস্তি দিয়ে লাভ হবেনা, পর্দার আড়ালে থাকা প্রকৃত মদতকারীদের তদন্তের আওতায় আনতে হবে, প্রয়োজনে বৈজ্ঞানিক লাই ডিটেকশন প্রক্রিয়া উপযোগ করে প্রকৃত সত্য বের করতে হবে। অন্যথা এইসব কার্যকলাপ চলতেই থাকবে এবং সরকারি কোষাগার এভাবেই কোটি কোটি প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত হতে থাকবে।
বিডিএফ এর আরেক আহ্বায়ক পার্থ দাস বলেন যে ইদানীং সুতারকান্দি সীমান্তে পরীক্ষণ বাড়ানো হয়েছে এবং ধরপাকড়ও করা হচ্ছে। কিন্তু কয়লা ও অন্যান্য সামগ্রীর লরিকে দিগরখাল চেকগেটে পরীক্ষণ করলে আর চেকিং এর প্রয়োজনীয়তাই নেই। তিনি বলেন দিগরখাল চেক গেটে কংগ্রেস আমলে লরিপ্রতি দশহাজার টাকা ঘুষ দিতে হত কিন্তু বিজেপি সরকারের কার্যকালে লরিপ্রতি ২ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে পাস করিয়ে দেবার বিনিময়ে সংগ্রহ করা হয় বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, সরকার যতই অস্বীকার করুক এটা সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন এবং এও বলেছেন যে আসাম পুলিশ এবং জেলা পরিবহন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দের প্রচ্ছন্ন মদতে এইসব চলছে। পার্থবাবু এই ব্যাপারে মূখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে এইসব অবৈধ কার্যক্রম চিরতরে বন্ধ করতে হলে মূখ্যমন্ত্রীকে সরকারি আধিকারিকদের তদন্তের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।তারজন্য সরকারের তরফে ইচ্ছাশক্তি দরকার। পার্থবাবু বর্তমান মূখ্যমন্ত্রীর কর্মদক্ষতাকে প্রশংসা করে আগামীতে বরাকের সিন্ডিকেট রাজের বিরুদ্ধে তার সদর্থক পদক্ষেপ দেখতে আগ্রহী থাকবেন বলে মন্তব্য করেন।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য।
কোন মন্তব্য নেই