Header Ads

প্রসঙ্গ : পুরভোট পিকে ও তৃণমূল কংগ্রেস !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
আজ দিল্লীতে সংসদভবনের সামনে গান্ধীমুর্তির পাদদেশে এক নয়নমনোহর অসাধারণ অবস্থান শোভা দেখলাম তৃণমূল সাংসদদের আয়োজনে। এই অসাধরণ অবস্থান শোভা কার কেমন লেগেছে জানি না--কিন্তু আমার কাছে এই শোভা অত্যন্ত তাৎপর্য্যময় মনে হয়েছে। তৃণমূল সাংসদরা চোখের ওপর কালো কাপড়ের ফেট্টি বেঁধেছেন--ঠোঁটের ওপর তর্জনী রেখে অবস্থানে অংশ নিয়েছেন এ্বং নিঃসন্দেহে তাঁদের ‘কিছু দেখবো না--কিছু বলবো না’ অবস্থান দলের নির্দেশেই আয়োজিত হয়েছে। কিছু দেখলে কিছু না কিছু বলতেই হয়--কিছু না দেখলে বলার কোনো সুযোগ বা অধিকার থাকে না। এবারের সংসদে তৃণমূল সাংসদরা কিছু না দেখার এবং কিছু না বলার প্রস্তুতি নিয়েছেন কিনা সেটা ক্রমশঃ প্রকাশ্য। অমিত শাহ’র পদত্যাগের দাবিতে তাঁরা ওয়েলে নেমে এসে সংসদ উত্তাল করবেন কিনা সেটাও দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন রাজ্যবাসী। 

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে আমার মনে হচ্ছে--আগামী পুর ও বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল রাজ্যবাসীর দোরে দোরে নিজেদের উন্নয়ন যজ্ঞের খতিয়ান নিয়ে মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করবে--তৃণমূল ছাড়া এ রাজ্যের জনগণের আর কোনো গতি নেই। প্রকৃতপক্ষে এতে ভোট রাজনীতিতে যতটা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে সেটা মোদী-শাহ বিরোধী একবগ্গা আন্দোলন বা বিক্ষোভ প্রদর্শনের দৌলতে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেড়ে যেতে পারে। কারণ, পুর ও বিধানসভা ভোটের আগে নারদা-সারদা-রোজভ্যালি কেসে বড় মাপের নেতাদের হাজত বাস ঠেকানো অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে এবং তাতে ভোট রাজনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব দলকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। দলের নব নিযুক্ত কর্পোরেট ভোট ম্যানেজার পিকে-ও এই দিকটা নিয়ে নিয়মিত গবেষণা এবং তথ্য ও খবর সংগ্রহে মনযোগী রয়েছেন বলেই আমার ধারণা। ভোটের মুখে বিজেপি যেমন আস্তিনের নিচে লুকিয়ে রাখা অস্ত্র বের করে আনে--ঠিক তেমনই বিজেপি বিরোধীদেরও ভোটের মুখে কিছু অস্ত্র আস্তিনের নিচে চালান করে দিয়ে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হয়। ফলে তীব্র কেন্দ্র বিরোধিতা এবং সিএএ-এনপিআর বিরোধিতার ঝাঁঝ যথেষ্ট কমিয়ে পুর ভোটের প্রাক্কালে এক-আধ দিন নয় দীর্ঘ ৭৫ দিন ধরে ‘জনসেবা মূলক জনসংযোগ’-এর রাজনীতিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হয় ! তৃণমূলকে এখন সে দিকেই নজর দিতে হচ্ছে।
তৃণমূল পিকে’কে দলের প্রাণবায়ু রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো চিকিৎসার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। পিকে-ও পূর্ণ উদ্যোমে সুচিকিৎসার দায়িত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে তিনি তাঁর ‘টিম’ পাঠিয়ে দলের প্রকৃত হালহকিকৎ বোঝার এবং খুঁটিয়ে জানার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন বটে--কিন্তু তিনি তাঁর টিমের সদস্যদের তৃণমূল সাংসদ-মন্ত্রী-বিধায়ক-পুরচেয়ারম্যান-কাউন্সিলর সহ দলের অসংখ্য পদাধিকারীদের প্রভাব বা দাপট থেকে কতটা মুক্ত রাখতে পেরেছেন সেটা টের পেতে অপেক্ষা করতে হবে পুর ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ্যে আসা পর্যন্ত। প্রার্থী তালিকা দেখে যদি মনে হয় পিকে তাঁর টিমের সদস্যদের ১০০% ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রভাব মুক্ত রাখতে পেরেছেন এবং তাদের তৈরি রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত প্রার্থী তালিকা তৈরি করে দলনেত্রী মমতার হাতে তুলে দিতে পেরেছেন তাহলে আশা করা যায় এবারে প্রার্থী তালিকায় তোলাবাজ চাঁদাবাজ বকলমে প্রমোটার সিণ্ডিকেটবাজ রূঢ়-খিস্তিবাজ লুম্পেন টাইপের ‘‘জনসেবক’’দের ফের প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে না।
পুরসভাগুলিতে প্রধানমন্ত্রী আবাসযোজনার সুযোগ বন্টন নিয়ে ভয়ঙ্কর রকমের দুর্নীতি হয়েছে। পিকে যদি সে সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহ করে বিষয়টি সম্পর্কে মমতাকে অবহিত করে থাকেন তাহলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়--এবারে সেইসব কেলেঙ্কারীর সঙ্গে যুক্ত কাউকেই টিকিট দেওয়া হবে না। আগেই শুনেছি পুর প্রার্থী নির্বাচনে পিকে ৫০%-এর বেশি কাউন্সিলরদের ছেঁটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। আমার মতে সেটা ৯০ শতাংশ হলেই পুরবাসী খুশি হতে পারে। যাবতীয় উন্নয়নের মধ্যে টাকা লেনদেনের যে জঘন্য সংষ্কৃতি গড়ে উঠেছে তাতে মানুষ প্রচণ্ড বিরক্ত। মমতা রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবেন--প্রচুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন--নানান প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্যে কাজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর সেইসব প্রচেষ্টা মার খায় তাঁরই ‘‘বিশ্বস্ত’’ অনুগামীদের আগ্রাসী ক্ষুধার কারণে।
মমতা খবর পান না--জেলায় জেলায় বিশেষ বিশেষ নেতা-কর্মীদের কাছে ‘‘কোটা পূরণ’’-এর নির্দেশ আসে--সেই নির্দেশ অনুযায়ী তোলাবাজিতে সক্রিয় থাকে বিশেষ বিশেষ অনেকেই। বিপুল টাকার অঙ্কে নিয়োগপত্র বিক্রির সংস্কৃতি রমরম করে চলতে থাকলেও যাবতীয় খুঁটিনাটি মমতার অজানাই থেকে যায়। যখন গণ বিক্ষোভের আঁচে সেসব উঠে আসে তাঁর কানে তিনি নিঃসঙ্কোচে কাটমানি ফেরতের নির্দেশও দিয়ে দেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কোটা পূরণের বিনিময়ে যারা টিকিট এবং পদ আদায় করে নিয়ে চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতা করে চলেছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা তিনি নিতে পারছেন না। ফলে ক্রুদ্ধ বিরক্ত মানুষ তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিজেপিমুখী হয়ে যাচ্ছে !
লোকসভা নির্বাচনের পর মমতা বুঝতে পারছিলেন তাঁর দলের সিংহভাগই দুর্নীতিবাজ ধান্ধাবাজদের কব্জায় চলে গেছে যাদের খবর তিনি রাখতে পারেন নি। ব্যবস্থা নিতে গেলেই তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন এদের সকলেই প্রায় কোনো না কোনো নেতার আশীর্বাদে রীতিমতো করেকম্মে খাচ্ছে ! এদের শনাক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হলে নিজের ‘‘বিশ্বস্ত সৈনিকদের’’ ওপর আর ভরসা রাখা যাবে না--তারা সকলেই তাঁর মনোরঞ্জনের চেষ্টায় সত্যগুলিকে গোপন করে এসেছে। ফলে ভীষণভাবেই প্রয়োজন অনুভব করলেন পিকে’র মতো একজন আমূল কর্পোরেট ভোটকৌশলীর। পিকে তাঁর সামনে একের পর এক শিহরণ তোলার মতো রিপোর্ট পেশ করতেও ভুল করেন নি। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই পিকে নির্ভরতা তাঁকে কতটা রক্ষা করতে পারে সেটাই এখন দেখার।
পুরভোটে তাঁর দলের যত খারাপ পরিস্থিতিই হোক না কেন বিজেপি’র কাছে তিনি হারছেন না। কলকাতা-হাওড়া তাঁর হাতেই থাকবে। শিলিগুড়ি এবারেও এই মুহূর্তে অনিশ্চিত। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে হাল্কা থেকে মাঝারি ধরণের বিজেপি-বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকছে। ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কিন্তু উত্তরবঙ্গে থাকছেই। সবটাই নির্ভর করছে প্রার্থী তালিকার ওপর। এর ওপর রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। এই জোটের মাটি কাটার সম্ভাবনা পুরভোটে কিন্তু থাকছেই। বিজেপি এই মাটি কাটার সুবিধে বহু ক্ষেত্রেই পেতে চলেছে বলে আমার ধারণা। ভোটের মুখে আরও কিছু লেখার ইচ্ছে থাকলো আমার !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.