বাজেট ফাঁস! কংগ্রেসের ওয়াক আউট হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নির্বাচনমুখী বাজেট পেশ করে কল্পতরু সাজলেন
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : আজ বিধানসভায়
অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করতে গিয়ে কল্পতরু
সাজলেন। তিনি রাজ্যের ২৭ লক্ষ পরিবারকে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দানের কথা ঘোষণা করে
ব্যতিক্রমী বাজেট পেশ করলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অনুসরনে
মাসে ৩০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা ঘোষণা
করেন। এবার রাজ্যের প্রায় ৫৭ লক্ষ পরিবারকে বিনা মূল্যে চাল খাওয়াবেন। রাজ্যের
চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্য তিনি আক্ষরিক অর্থে কল্পতরু হলেন। সমাজের অর্ধাকাশস্বরূপ
মহিলাদের প্রতিও তিনি কার্পণ্য করেননি। প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে সফল
করতে তিনি ৩২.৬৬ লক্ষ পরিবারের শৌচালয় নির্মাণের কথা জানালেন। রাজ্যের ১ লক্ষ ৪১
হাজার পরিবারে গৃহে বিশুদ্ধ জল সরবরাহের আশ্বাস দিলেন। মহিলাদের অরুন্ধতী প্রকল্প
অনুযায়ী বিবাহযোগ্য মহিলাদের বিয়ের সময় এক তোলা করে সোনার দাম ৩০ হাজার টাকা
করে দেওয়া কথা ঘোষণা করেছিলেন, তা বৃদ্ধি করে ৪০ হাজার টাকা করলেন। বিধবা মহিলাদের মাসে ২৫০ টাকা পেনশন, চল্লিশ বছরের ঊর্ধ্বে অবিবাহিত মহিলাদের জন্য
২৫০ টাকা করে পেনশন,
মহিলাদের আত্মসহায়ক গোষ্ঠীকে
২৫ হাজার টাকা করে অনুদান,
বিধবা মহিলাদের এককালীন
পঞ্চাশ হজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা জানালেন। মহিলা সবলিকরণের অন্তর্গত আরও বেশকিছু
কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ছাত্রীদের মাসে ১৮টি
করে নেপকিন কেনার ভাতা দেওয়ার অভিনব ঘোষণাও করলেন। এর জন্য ২৫ কোটি টাকা ধার্য
করা হয়েছে। গুয়াহাটি মহানগরে এক গোলাপী রঙের যাত্রীবাহী বাস চালানো হবে। সেই
বাসে বরিষ্ঠ নাগরিক এবং মহিলাদের জন্য কোনো মাশুল লাগবে না। গুয়াহাটি কাছারিঘাট
থেকে উত্তর গুয়াহাটি পর্যন্ত প্রস্তাবিত রোপওয়ে আগামীমাসের মধ্যে চালু হচ্ছে।
বিদ্যুৎ চিত্র পাল্টানোর জন্য বেশ কিছু প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। ২৫ হাজার গ্রামে
গ্রিডের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। গ্রাহকদের ঘাড়ে যাতে
বিদ্যুৎ মাশুল চেপে না বসে তার জন্য সরকার বিদ্যুৎ পর্ষদকে ৩০০ কোটি টাকা আর্থিক
সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন। ৬৯.৬৬ শতাংশ বাড়িতে ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া
হবে। রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে উন্নতমানে দশ কিলোমিটার করে রাস্তা বানাবে
সরকার। অতিরিক্ত সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করবে। কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থাকা ছাত্রছাত্রীদের জন্য মাসিক খরচা পরিমাণ বাড়িয়ে
দশ হাজার টাকা করা হয়েছে। কাজিরঙা মানস এবং ওরাং অভয়ারণ্যে গন্ডার রক্ষাকারী
বনকর্মীদের অতিরিক্ত বেতন ভাতা দেওয়া হবে। মরান, মটক, দেউরী জনগোষ্ঠীর স্বশাসিত পরিষদের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৫০০ কোটি টাকা
বরাদ্দ করা হয়েছে। বড়ো শান্তি চুক্তি উন্নয়নের পর আত্মসমর্পণকারী ক্যাডারদের
ভরণপোষণের পুরো দায়িত্ব নেবে সরকার। শিক্ষা ও বোড়ো ভাষা উন্নয়নে সরকার ব্যবস্থা
নেবে। খিলঞ্জীয়া মুসলিমদের জন্য সরকার আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে। শ্ৰীমন্ত
শংকরদেবের স্মৃতি বিজরিত বটদ্ৰবা উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। আহোম
রাজাদের সমাধি ক্ষেত্র চরাইদেওয়ের উন্নয়নে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী হিসাবে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ইতিমধ্যে পাঁচবার বাজেট পেশ করেছেন। এবার
বর্তমান সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাজেটের লক্ষ্য ছিল
মানুষকে স্বস্থি দেওয়া। তিনি তাই কল্পতরু সেজে সব মানুষের স্বার্থে অকাতরে অর্থ
বিলিয়ে গেছেন,
কার্পণ্য করেননি।
স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আজ
মাথায় মরান উপজাতি গোষ্ঠীর সাদা পাগরি পড়ে প্রায় চারঘণ্টাব্যাপী ভাষণ দিতে
গিয়ে তারই স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা জানান। তিনি বলেন, ১৭টি জেলায় বিলা পয়সায় ডায়ালেসিস দেওয়ার
ব্যবস্থা হয়েছে। রাজ্যে নুমলিগড় শোধনাগারে ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সরকার তাদের
অংশীদারিত্ব ২৬ শতাংশ করার কথা ঘোষণা করে মন্ত্রী বলেন, এক বৃহৎ প্রকল্প সরকার গ্রহণ করেছে। আজ
বিধানসভায় বাজেট আগেই প্রকাশ হয়ে গেছে অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের বিধায়করা বাজেট
ভাষণ বর্জন করেন।
কোন মন্তব্য নেই