অশ্লীলতার মোড়কে রবীন্দ্রগান-- অপ্রত্যাশিত নয় একেবারেই !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
প্রথমে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তারপরেই মালদার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের চার ছাত্রীর রবীন্দ্রনাথের গানকে প্যারডি বানিয়ে প্রতিটি লাইনে অশ্লীল শব্দ পাঞ্চ করে গাইতে গাইতে টিকটক ভিডিও তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় অনেকেই তাজ্জব হয়ে গেছেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বসন্তোৎসব’ রবীন্দ্র-সংস্কৃতি’র একটি বিশেষ গর্বের অনুষঙ্গ হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে গেছে।
ভিডিও ক্লীপিংস দেখে আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল রবীন্দ্রভারতীর ছাত্র-ছাত্রীরা আর যাইহোক ‘হোক কলরব’ জাতীয় প্রকাশ্যে চুম্বন আন্দোলনে মেতে ওঠার মতো ‘‘সাহসী’’ নয়--সুতরাং এরা কেউ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী হতে পারে না। কারণ, নিজেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখে, বিশেষ করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্মধারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, চূনকালি মাখাবার মতো ‘‘কলরব’’মার্কা আঁতলেমী বা ফাজলামি করার নির্লজ্জ সাহস ছাত্র-ছাত্রীরা দেখাতে পারে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দু’একজন শিক্ষক বন্ধু আছেন যাঁদের আমি চিনি এবং তাঁদের শিক্ষাদীক্ষা রুচি ও সৌজন্যবোধ সম্পর্কেও আমার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সুতরাং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদের কোনরকম অনৈতিক অশোভন কাজে ‘অনুপ্রেরণা’ সরবরাহ করতে পারেন বলে আমি মনে করি না। পরে জানাও গেল যেসব ছাত্র-ছাত্রী এমন ঘৃণ্য দৃশ্যের অবতারণা করেছে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী নয়। এদের আচরণ তাদের নিজেদের কলেজের শিক্ষক ও নিজের নিজের মা-বাবা’র মুখে চূনকালি মাখিয়ে দিয়েছে।
এই ধরণের অশ্লীল আচরণ করার মতো শিক্ষা এবং অশোভন রুচি কাদের উৎসাহে ও অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠছে সেটার অনুসন্ধান খুব জরুরি। এটা খুবই সত্যি যে, অধিকাংশ শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে নৈতিকতার অধঃপতন থেকেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই ধরণের নিম্নরুচির জন্ম হয়। অস্বচ্ছতা অসততা অশালীনতার পাঠ গ্রহণের জন্যে এদের আর খুব কষ্ট করতে হয় না। বাড়িতে এবং শিক্ষায়তনের পরিমণ্ডলে নৈতিকতার বিসর্জনের বাজনা প্রচুর পরিমাণেই শোনা যায়। আমি জানিনা, এই সব ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষকরা এবং অভিভাবকরা নিজেদের মাথা তুলে কিভাবে চলাফেরা করবেন !
‘মূল্যবোধ’ শব্দটাই অভিধান থেকে উঠে যেতে বসেছে। সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা-সংস্কারের অভাবের পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে রাজনৈতিক দাদাগিরি ও আগ্রাসনের দাপটে। আমাদের মতো অনেকেরই স্মৃতিতে এখনও নিজেদের শিক্ষকদের ছবি নানা আদর্শগত ও নীতিগত কারণে উজ্জ্বল হয়ে আছে। দূর থেকে কোনো শিক্ষককে দেখে তড়িঘড়ি স্পীড সামলাতে না পেরে সাইকেল থেকে হুড়মুড় করে পড়ে গেছি, তবু হাল্কা চালে ‘যাচ্ছি স্যার’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারি নি। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সামান্যতম বেলেল্লাপনা করার সাহস আমাদের ছিল না। ভয় ছিল--কোথা থেকে কোন স্যারের নজরে পড়ে যাব ! শুধু ভয় নয়--দারুণ সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধাও থাকতো বলেই মাত্রাছাড়া অশালীন ‘‘কলরব’’ করার কালোয়াতি বা ওস্তাদী করার কথা ভাবতে পারতাম না। ফস্টি-নস্টি যা কিছুই করি না কেন শিক্ষকদের দৃষ্টি বাঁচিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে কখনো কিছু করি নি যে তা নয়--কিন্তু তার চেহারা এখন যা দেখছি তার একশো মাইলের মধ্যেও ছিল না। বাড়িতেও প্রতিনিয়ত মনিটরিং চলতো--পড়াশোনা ঠিক মতো করছি কিনা--আমার আচার-ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষকদের কোনো অভিযোগ আছে কি না ইত্যাদি নানা বিষয়ে। ইদানীংকালের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সিংহভাগই নানা ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতির সঙ্গে--যার পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে সন্তান-সন্ততি এবং ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই সব কিছু জেনেও কেউ এইসব ছেলেমেয়েদের অশালীন আচার-আচরণের প্রতিবাদে মুখোমুখি কঠিন অবস্থান নিতে সাহস করেন না--নানা ব্যাপারে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে। এইসব শিক্ষক ও অভিভাবকদের ব্ল্যাকমেলিং করা যে খুব সহজ সেটাও বহু ক্ষেত্রেই গোপন থাকে না।
প্রথমে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তারপরেই মালদার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের চার ছাত্রীর রবীন্দ্রনাথের গানকে প্যারডি বানিয়ে প্রতিটি লাইনে অশ্লীল শব্দ পাঞ্চ করে গাইতে গাইতে টিকটক ভিডিও তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় অনেকেই তাজ্জব হয়ে গেছেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বসন্তোৎসব’ রবীন্দ্র-সংস্কৃতি’র একটি বিশেষ গর্বের অনুষঙ্গ হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে গেছে।
ভিডিও ক্লীপিংস দেখে আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল রবীন্দ্রভারতীর ছাত্র-ছাত্রীরা আর যাইহোক ‘হোক কলরব’ জাতীয় প্রকাশ্যে চুম্বন আন্দোলনে মেতে ওঠার মতো ‘‘সাহসী’’ নয়--সুতরাং এরা কেউ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী হতে পারে না। কারণ, নিজেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখে, বিশেষ করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্মধারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, চূনকালি মাখাবার মতো ‘‘কলরব’’মার্কা আঁতলেমী বা ফাজলামি করার নির্লজ্জ সাহস ছাত্র-ছাত্রীরা দেখাতে পারে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দু’একজন শিক্ষক বন্ধু আছেন যাঁদের আমি চিনি এবং তাঁদের শিক্ষাদীক্ষা রুচি ও সৌজন্যবোধ সম্পর্কেও আমার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সুতরাং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদের কোনরকম অনৈতিক অশোভন কাজে ‘অনুপ্রেরণা’ সরবরাহ করতে পারেন বলে আমি মনে করি না। পরে জানাও গেল যেসব ছাত্র-ছাত্রী এমন ঘৃণ্য দৃশ্যের অবতারণা করেছে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী নয়। এদের আচরণ তাদের নিজেদের কলেজের শিক্ষক ও নিজের নিজের মা-বাবা’র মুখে চূনকালি মাখিয়ে দিয়েছে।
এই ধরণের অশ্লীল আচরণ করার মতো শিক্ষা এবং অশোভন রুচি কাদের উৎসাহে ও অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠছে সেটার অনুসন্ধান খুব জরুরি। এটা খুবই সত্যি যে, অধিকাংশ শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে নৈতিকতার অধঃপতন থেকেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই ধরণের নিম্নরুচির জন্ম হয়। অস্বচ্ছতা অসততা অশালীনতার পাঠ গ্রহণের জন্যে এদের আর খুব কষ্ট করতে হয় না। বাড়িতে এবং শিক্ষায়তনের পরিমণ্ডলে নৈতিকতার বিসর্জনের বাজনা প্রচুর পরিমাণেই শোনা যায়। আমি জানিনা, এই সব ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষকরা এবং অভিভাবকরা নিজেদের মাথা তুলে কিভাবে চলাফেরা করবেন !
‘মূল্যবোধ’ শব্দটাই অভিধান থেকে উঠে যেতে বসেছে। সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা-সংস্কারের অভাবের পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে রাজনৈতিক দাদাগিরি ও আগ্রাসনের দাপটে। আমাদের মতো অনেকেরই স্মৃতিতে এখনও নিজেদের শিক্ষকদের ছবি নানা আদর্শগত ও নীতিগত কারণে উজ্জ্বল হয়ে আছে। দূর থেকে কোনো শিক্ষককে দেখে তড়িঘড়ি স্পীড সামলাতে না পেরে সাইকেল থেকে হুড়মুড় করে পড়ে গেছি, তবু হাল্কা চালে ‘যাচ্ছি স্যার’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারি নি। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সামান্যতম বেলেল্লাপনা করার সাহস আমাদের ছিল না। ভয় ছিল--কোথা থেকে কোন স্যারের নজরে পড়ে যাব ! শুধু ভয় নয়--দারুণ সম্ভ্রম ও শ্রদ্ধাও থাকতো বলেই মাত্রাছাড়া অশালীন ‘‘কলরব’’ করার কালোয়াতি বা ওস্তাদী করার কথা ভাবতে পারতাম না। ফস্টি-নস্টি যা কিছুই করি না কেন শিক্ষকদের দৃষ্টি বাঁচিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে কখনো কিছু করি নি যে তা নয়--কিন্তু তার চেহারা এখন যা দেখছি তার একশো মাইলের মধ্যেও ছিল না। বাড়িতেও প্রতিনিয়ত মনিটরিং চলতো--পড়াশোনা ঠিক মতো করছি কিনা--আমার আচার-ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষকদের কোনো অভিযোগ আছে কি না ইত্যাদি নানা বিষয়ে। ইদানীংকালের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সিংহভাগই নানা ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছেন দুর্নীতির সঙ্গে--যার পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে সন্তান-সন্ততি এবং ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই সব কিছু জেনেও কেউ এইসব ছেলেমেয়েদের অশালীন আচার-আচরণের প্রতিবাদে মুখোমুখি কঠিন অবস্থান নিতে সাহস করেন না--নানা ব্যাপারে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে। এইসব শিক্ষক ও অভিভাবকদের ব্ল্যাকমেলিং করা যে খুব সহজ সেটাও বহু ক্ষেত্রেই গোপন থাকে না।
রাজ্যের শিক্ষানীতির দুর্দশার কারণেও শিক্ষায়তনগুলো থেকে বিশেষ কিছু পাওয়ার থাকছে না। ছাত্রছাত্রীরা তাই রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রীতিমতো বেলাগাম হয়ে যা খুশি করার ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে। সমস্যার গভীরে না গিয়ে তাই চূড়ান্ত আদিখ্যেতা দেখিয়ে গেল-গেল রব তোলার কোনো মানে হয় না। ছাত্র-ছাত্রীদের এই বেপরোয়া অশ্লীল-সংস্কৃতি ও আচরণ তাই খুব অপ্রত্যাশিত নয় !
কোন মন্তব্য নেই