Header Ads

প্রাগজ্যোতিষ মহাবিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান


নয়া ঠাহর প্রতিবেদন
একুশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতি বছরের মতো এবারও সাড়ম্বরে পালিত হলো প্রাগজ্যোতিষ মহাবিদ্যালয়ে। স্থানীয় আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাধাগোবিন্দ বরুয়া মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন প্রাগজ্যোতিষ মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র-গবেষক, গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক উষারঞ্জন ভট্টাচার্য। প্রাগজ্যোতিষ মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. জ্যোতির্ময় সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এদিনের আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে অধ্যক্ষ ড. মনোজ কুমার মহন্ত প্রতিটি মানুষের জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্বের বিষয়ে বলেন। ইংরেজি কাজের ভাষা হলেও মাতৃভাষাকে কখনই অবহেলা করা উচিত নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। অধ্যাপক উষারঞ্জন ভট্টাচার্যর প্রতিটি কথাই উপস্থিত সবার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের কবি শামসুর রহমানকে কেন আবু সয়ীদ আইয়ুব ‘মজলুন আদিফ’ বা ‘নির্যাতিত কবি’ আখ্যা দিয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি ভাষাসাহিত্য চর্চায় প্রতিবন্ধকতার প্রসঙ্গটি আলোচনা করেন।



 প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শিশির কুমার দাসের একটি লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের সব ভাষাই, যেমন অসমিয়া-বাংলা-ওড়িয়া ইত্যাদি, আসলে গৌণ ভাষা। তাদের সবাইকে এক বা একাধিক প্রধান ভাষার সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এতে দুটি সমস্যা দেখা দেয় – প্রথমটি মাৎস্যন্যায়ের, আর দ্বিতীয়টি এই মাৎস্যন্যায়কে প্রতিহত করতে গিয়ে তৈরি হয়। সেটি হলো ভ্রান্ত স্বাদেশিকতার বোধ। শিশির কুমার দাসের সাবধান বাণী উল্লেখ করে অধ্যাপক ভট্টাচার্য মনে করিয়ে দেন যে, ভ্রান্ত স্বাদেশিকতা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে। এর সঙ্গে যোগ করেন তিনি ভ্রান্ত পরানুকরণকে। প্রতিটি ভাষাই তাঁর মতে প্রবহমান নদী – এই প্রবহমানতা সম্বন্ধে সচেতন থাকা এবং তার মহিমা অনুধাবন করা সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। প্রসঙ্গত, অধ্যাপক উষারঞ্জন ভট্টাচার্য রাষ্ট্রসঙ্ঘে মাতৃভাষা দিবস হিসাবে একুশ ফেব্রুয়ারির দিনটিকে স্মরণ করার মূল প্রস্তাবক মোয়াজ্জেম আলির অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রাগজ্যোতিষ মহাবিদ্যালয়ের অসমিয়া বিভাগের প্রধান ড. বৈকুণ্ঠ রাজবংশী এবং ইতিহাস বিভাগের প্রবক্তা শ্রী বিশ্বজ্যোতি দেব মহন্তও অংশ নেন। তাঁরা তাঁদের সংক্ষিপ্ত ভাষণে জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় ভাষাচর্চার গুরুত্ব সম্বন্ধে বলেন। সোশ্যাল মিডিয়ার আগ্রাসনে ভাষার আদল বদলে যাবার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার চেষ্টার কথা তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে।


অনুষ্ঠানের অন্য আকর্ষণ ছিল দুটি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের গান ও নৃত্য পরিবেশন। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনের পাশাপাশি তারা অসমিয়া ও বাংলা ভাষায় ভূপেন হাজরিকার ‘বিস্তীর্ণ দুপারের’ গানটিও পরিবেশন করে। ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটির সঙ্গে সুচারু নৃত্য পরিবেশন আর একুশ ফেব্রুয়ারি দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যায় বাংলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল প্রশংসনীয়। দুটি মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রী ছাড়াও প্রাগজ্যোতিষ মহাবিদ্যালয়ের সংস্কৃত, অসমিয়া ও হিন্দি বিভাগের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.