মোদি সরকারের স্বচ্ছ ভারত থমকে গেছে রেলওয়েতে, যাত্রী সাধারণের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলে নৈরাজ্য চলছেই। যাত্রীদের পণবন্দী করে বৈধ যাত্রীদের কিভাবে নির্যাতন করা হয় তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই প্রতিবেদকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। গত ৩০ এপ্ৰিল এই প্রতিবেদক তাঁর দিল্লীবাসী ভাই সমেত আরও এক ভাইকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিসাপ্তাহিক মহামান্য তিলক এক্সপ্রেস গুয়াহাটি-জামালপুর ট্ৰেন নং- ১৫৬৪৮ চড়ে বিহারের রেলওয়ে শহর জামালপুরে গিয়েছিলাম। কোচ নং- এস১১ ৩৩, ৩৬, ৪১ নম্বর তিনটি সংরক্ষীত আসন আমাদের ছিল। অসুস্থ দিদিকে দেখার উদ্দেশ্যেই আমাদের এই দীর্ঘ সফর। গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টশনে আমরা হোঁচট খেলাম। যাত্রী সাধারণকে অবগত না করেই এক রেল কর্মী আমাদের নির্দিষ্ট কোচ ১১ নং কে পাল্টে ১২ নং করে দিলেন। আমরা ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে পুনরায় পরের কামরায় গিয়ে বসলাম। সেখানে দেখা গেল ১০ নং কোচের যাত্রীরা ভিড় জমিয়েছেন। কোনও রকমে আসন সংগ্রহ করে আমাদের যাত্রা শুরু হল। টিকিট কালেক্টর এবং রেল পুলিশ কাউকেই দেখা গেল না। রাত ১২ টা নাগদ বিহারের কিষেনগঞ্জ স্টেশন এল। তখন দেখা গেল প্রায় শ’ তিনেক বিনা টিকিটের যাত্রী। আমাদের তিনজনকে জবরদস্তি করে উঠিয়ে দিয়ে নিজেরা বসবার চষ্টা করে। টিটি জিআরপিএফের খোঁজ করলাম পেলাম না। প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ বিনা টিকিটের যাত্রী আমাদের ঘাড়ে, মাথায়, পায়ের তলায় দখল করে বসে পড়ল, শুয়েও পড়ল। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করলাম। তথাকথিত বায়ো টয়লেটেও যেতে পারলাম না। একবার কোনওমতে টয়লেটে গিয়ে দেখা গেল টয়লেটের বাইরে মলমূত্র উপচে পড়েছে। জল নেই। বিনা জল, বিনা পাখায় চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে কোনও মতে রাতটা কাটল। সাহেবগঞ্জ স্টেশনে একদল টিটিকে দেখলাম অন্য কামরায় চলে গেলেন। জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত অবৈধ যাত্রীদের ভিড় একটুও পাতলা হল না। সেই পরিস্থিতির মধ্যেই জামালপুরে নামলাম। আমি প্রত্যাহ্বান জানাচ্ছি রেল কর্তপক্ষকে, সৎ সাহস থাকলে তদন্ত করুন। অবৈধ যাত্রীদের সঙ্গে রেলের টিটিদের কিসের সম্পর্ক? ঝুলি থেকে বেড়াল বেড়িয়ে পড়বে। জামালপুর থেকে গুয়াহাটি ফেরার পথেও একই অভিজ্ঞতা হল দিল্লী-ডিব্রুগড় ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসেও। প্ৰথম থেকেই যথারীতি রিজাৰ্ভেশন কামরায় টিকিটবিহীন যাত্ৰীদের ভিড় ছিল। ট্ৰেন নং- ১৪০৫৬ কোচ ৫ -এ ১ নং আসন ছিল এই প্ৰতিবেদকের। অনেক্ষণ ধরে ট্রেনে জল ছিল না। তথাকথিত বয়ো টয়লেটগুলিতে মলমূত্র উপচ পড়েছে।
অসমে ঢোকর পর কামরাগুলোতে আলু, গাজর প্রভৃতি সব্জি ওঠানো শুরু হল। টয়লেটগুলোতে যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ। ওই রাস্তায় বস্তা দিয়ে জাম করে রাখা হল। টিটি জিআরপিএফদের লুকোচুরীর মধ্যে দেখা গেল, যথারীতি সব্জির বস্তাগুলো জলের ট্যাপ বন্ধ করে টাইট করে বেধে রাখা হয়েছে। টিটিরা তা খুঁজেই পেলেন না। মোদি সরকারের স্বচ্ছ ভারত থমকে গেছে রেলওয়েতে, যাত্রী সাধারণের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই।
কোন মন্তব্য নেই