ভারতাত্মাকে প্ৰকৃতাৰ্থে অনুধাবন করে প্ৰধানমন্ত্ৰী দেশ চালাবেন, এই আশা নিয়েই দেশের পরবৰ্তী প্ৰধানমন্ত্ৰীকে শুভেচ্ছা
ফাইল ছবি
রিংকি মজুমদার
লোকসভা ভোটের এক্সিট পোলে জয়ের যতটা আভাস ছিল তার থেকেও ভাল ফল হয়েছে। গেরুয়া ঝড়ে উড়ে গিয়েছে বিরোধী শিবির। ২০১৪ থেকেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের একবার সরকার গঠন করছে এনডিএ তথা বিজেপি। তবে গত পাঁচ বছরে বিজেপির আমলে নোটবন্দি, অসমে রাষ্ট্ৰীয় নাগরিকপঞ্জি তথা এনআরসি নিয়ে যে সব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তাতে শাসক দলের ভোটব্যাঙ্কে প্ৰভাব পড়ার আশঙ্কা করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে, মেরুকরণের রাজনীতি করছে, এ নিয়ে বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় সমালোচনা হয়েছে। সে সমস্ত কিছুকে পেছনে ফেলে ফের মোদি ম্যাজিকে ভর করেই দেশজুড়ে রেকৰ্ড করা ফল করল বিজেপি। গোবলয় তো বটেই, গোবলয়ের বাইরের রাজ্যগুলোতেও আছড়ে পড়ল নরেন্দ্ৰ মোদি, অমিত শাহ ঝড়। ভোটের আগে এবং ভোট চলাকালিন বিভিন্ন জনসভায় অমিত শাহের কিছু বক্তব্যের প্ৰভাব বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে পড়বে বলেই মনে করা হয়েছিল। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরেকটি মহল মনে করছেন এটা তো হওয়ারই ছিল। তার কারণ বিজেপি শুরু থেকেই দেশবাসীর কাছে প্ৰশ্ন রেখেছিল ‘মোদি বনাম কে?’ বিরোধী দলগুলির মধ্যে একটা গোটা দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারার মতো মুখ কোথায়? তাই দেশবাসীর কাছে আর কোনও অপশন থাকল না বলেই মনে করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলিও একজোট হয়ে শক্ত সামৰ্থভাবে দাঁড়াতে পারেনি। এটা তাদের ব্যৰ্থতা। তবে একটি কথা মানতেই হবে, ১৩০ কোটির জনসংখ্যার দেশকে ঠিকমতো এগিয়ে নিতে যেতে এবং এক সুস্থ গণতান্ত্ৰিক পরিবেশ গড়ে তুলতে শক্তিশালী বিরোধী পক্ষেরও যথেষ্ট প্ৰয়োজন রয়েছে। এমনটাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তা নইলে স্বৈরাচারী শাসনের একটা সম্ভাবনা কিন্তু থেকে যায়। তবে একটা কথা মেনে নিতেই হবে বৰ্তমানে মোদি ছাড়া আর অন্য কাউকে দেশবাসী মেনে নিতে রাজি নয়। নরেন্দ্ৰ মোদির কাছেই দেশ নিরাপদে থাকবে বলেই মনে করছেন দেশবাসী। তবে যে সব হিন্দু মুসলিম বাঙালিরা এনআরসি নিয়ে নিজের নাগরিকত্ব প্ৰমাণ করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হচ্ছে তাদের জন্য বিজেপি সরকার কি করে? সেটা অবশ্যই লক্ষনীয় হবে। শুধু তাই নয় দেশে নোটবাতিল তারপর বিজেপি সরকার হিন্দু মসলিম মানুষদের মধ্যে ঐক্যতা বজায় রাখতে কতটুকু সফল হবে, বিজেপি সরকার আসার পর দেশে বেকার সমস্যা বেড়েছে। অৰ্থ উপাৰ্জনের রাস্তা খুইয়েছে লক্ষ লক্ষ যবকযুবতী। দেশের বেকার যুবসমাজকে কৰ্মসংস্থাপনের জন্য বিজেপি সরকার কি কি পরিকল্পনা গ্ৰহণ করে, তা অবশ্যই লক্ষনীয় হবে। এখন সবার নজর রয়েছে নতুন সরকার গঠনের দিকে। বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা মুরলি মনোহর যোশী, লাল কৃষ্ণ আডবানিকে বিজেপির আদি পুরুষ বলা যেতে পারে। তাঁদের হাত ধরেই বিজেপি আজ সৰ্বভারতীয় পৰ্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাঁদের মতো দুজন শীৰ্ষ স্থানীয় নেতাকে অন্তত সরকার তাঁদের সম্মানজনক আসনে প্ৰতিষ্ঠা করে তাঁদের মৰ্যাদা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্ৰসঙ্গত, বিজেপির আমলে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা যেমন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্ৰ বসুর পরিকল্পিত পঞ্চবাৰ্ষিক পরিকল্পনা পৰ্ষদকে ভেঙে দিয়ে নীতি আয়োগ তৈরি করা হয়, ন্যাশনাল স্যাম্পল সাৰ্ভের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলা, রিজাৰ্ভ ব্যাঙ্কের গভৰ্নর পদ নিয়ে অযথা রাজনীতি হল, দেশের বিচার ব্যবস্থা প্ৰশ্ন চিহ্নের মুখে পড়ল। সিবিআইয়ের মতো দেশে শীৰ্ষ স্থানীয় তদন্তকারী সংস্থাও আজ প্ৰশ্ন চিহ্নের মুখে। দেশের নিৰ্বাচন ব্যবস্থাও প্ৰশ্ন চিহ্নের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে সারা বিশ্বে যেখানে পরিত্যাগ করা হয়েছে সেখানে এই ভারতবৰ্ষে ইভিএম-এর গ্ৰহণযোগ্যতা নিয়ে বহু প্ৰশ্ন উঠেছে। আগামী লোকসভা নিৰ্বাচনের আগে ইভিএম-এর গ্ৰহণযোগ্যতা নিয়ে যাতে আর কোনও মহলে প্ৰশ্ন না ওঠে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এইসব প্ৰতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিজেপি সরকারকে কাজ করতেই হবে। পরিশেষে বিজেপির একাই ৩০৩ টি আসনে জয়ী হয়েছে। তার মধ্যে একজনও মুসলিম সম্প্ৰদায়ের প্ৰতিনিধি নেই। ধৰ্ম নিরপেক্ষ ভারতবৰ্ষ যেখানে ১৪ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, শাসক দলে তাদের সন্তোষজনক প্ৰতিনিধিত্ব দরকার ছিল এমনটাই মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো ভাবতে হবে মোদি সরকারকে। বাঙালি অধ্যুষিত বৃহৎ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের সাম্প্ৰদায়িক মেরুকরণের ওপর ভোট বিভাজিত হয়েছে। এই দোষ থেকে বিজেপিও মুক্ত নয়। তাই ভবিষ্যতে ধৰ্ম নিরপেক্ষ ভারতবৰ্ষে তা অশনি সঙ্কেত এবং তা রোধ করতে হবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই শাসক দল বিজেপির সামনে বহু প্ৰত্যাহ্বান রয়েছে। শুধু খাদ্য-বস্ত্ৰ-বাসস্থান, সুস্বাস্থ্যের সমস্যা তো মৌলিক সমস্যা, তার পরেও রাষ্ট্ৰীয় নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা সহ বহু দিকেই সাম্প্ৰদায়িক ভারসাম্য রক্ষা করে দেশকে চালাতে হবে। কারণ আমাদের এই ভারতবৰ্ষ মহাপ্ৰভু চৈতন্যদেব, বুদ্ধদেব, আজান ফকির, শংকরদেবের ভারতবৰ্ষ। এখানে ধৰ্মীয় সহনশীলতার প্ৰয়োজন রয়েছে। কোনও ভাবেই যেন অসহিষ্ণুতা মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। গত পাঁচ বছরের বিজেপি শাসনে দেশের বিভিন্ন প্ৰান্তে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। এই সব কিছুর দিকে প্ৰখর দৃষ্টি দিয়ে ‘ব্ৰুট মেজোরিটি’ থাকা সরকারকে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে। সেকথা আমরা বিনিতভাবে পরবৰ্তী প্ৰধানমন্ত্ৰীকে শ্ৰদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমরা আশা করি পরবৰ্তী প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি তাঁর অতীতের ভুল ত্ৰুটিগুলো সংশোধন করে দেশকে সাৰ্বিক উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবেই ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ আক্ষরিক অৰ্থে সফল হবে।
কোন মন্তব্য নেই