Header Ads

‘‘....বামপন্থী মানেই যেন এক বিষাক্ত প্রজাতি’’


প্রশান্ত চক্রবর্তী

 মনুসংহিতায় "যজন" ও "যাজন"শব্দের প্রথম প্রয়োগ দেখা যায়(১/৮৮)। যজন মানে আত্মমঙ্গল অনুভব। নিজের মধ্যে সত্যানুভূতি, এবং তদনুরূপ আচরণশীল হওয়া। যাজন মানে ওই আত্মমঙ্গলচিন্তা, সত্যানুভব অন্যের মধ্যে সঞ্চারিত করা। আধুনিক বিশ্বে একমাত্র সৎসঙ্গীরা এই দুটি পবিত্র শব্দ বহন করে। জীবনে, অনুভবে। নিজের ভালো-মন্দ দিক অনুভব অনুধাবনই উত্তরণের প্রাথমিক উপায়। গুরু বললেন~
   "নিজের ত্রুটির 
ধার না ধেরে
     পরের ঘাড়ে 
দোষ চাপায়,
   অহংমত্ত এমন বেভুল
ক্রমে ক্রমে
  লুপ্ত পায়।"
সম্যক বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধি, উন্নয়নের ক্ষেত্রে আত্মসমীক্ষার মতো বৈজ্ঞানিক দর্শন আর কী আছে?!
•••
   আমার বন্ধু তালিকায় অনেক বামপন্থী আছেন। এঁরা অনেকেই গুণী, সুশিক্ষিত। সাহিত্য শিল্পজগতের মানুষ। অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে সুভদ্র। সুশীল। আমি ঘোর বামবিরোধী। একসময় উল্টোটা ছিলাম। এসএফআই করে বড় হয়েছি। বাম আন্দোলনের সাথে কুড়ি বছরের ঘর আমার। আসলে কম বয়সে মগজধোলাইর(সত্যজিৎ রায়ের "হীরক রাজার দেশে"-র মতো) শিকার হয়েছি। তবে তখনকার দিনে বীরেশ মিশ্র, অচিন্ত্য ভট্টাচার্যের মতো দেবতুল্য চরিত্রের বামপন্থী মানুষদের প্রভাবও পড়েছিল কমবেশি। কমরেড বীরেশ মিশ্র বাবার বন্ধু ছিলেন। আমাদের এমএলএ। প্রায়ই আসতেন আমাদের বাড়ি। সেই রিক্তআশ, উদারচিত্ত নিবেদিতপ্রাণ মানুষগুলো এখন নেই। আর নেই বলেই বামপন্থী মানেই যেন এক বিষাক্ত প্রজাতি। যেন বিষ ছড়ানোই এদের কাজ। এমনটাই দাঁড়িয়েছে আজ পরিস্থিতি। এই যেমন~ সীতারং ইয়েচুরি কয়দিন আগেই রামায়ণ-মহাভারতে কেবল হিংসা আছে এইরকম একটা ভয়ংকর স্টেটমেন্ট দিলেন! এই হচ্ছে আজকের বাম। "টুকরে টুকরে গ্যাঙ"-এর মূল থিংক ট্যাংক। এরাই উসকায়। স্কুল থেকে টার্গেট করে ছেলেপুলেদের। এরপর কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। কেননা এরা জানে কম বয়সীদের শরীরের মধ্যে বায়োকেমিক্যাল সিক্রেশন ঘটে। ফলত আবেগ বেশি হয়। সেই আবেগকেই পুঁজি করে এরা আন্দোলন-প্রতিবাদ-শোষণ-নিপীড়ন, বঞ্চনা~সর্বহারা ইত্যাদি শব্দ এদের মাথায় পোরে, ঠোকে এবং এদের লেলিয়ে দেয়। বিভিন্ন ইস্যু, অছিলা। সমাজে-রাষ্ট্রে অশান্তি করাই এদের মূল অ্যাজান্ডা। নানা নানারকম শিক্ষাশিবির করে মাথায় ক্রমাগত নিগেটিভ ভাবনা পেরেকের মতো ঠুকতে থাকে। নিরন্তর এই প্রক্রিয়ার ফলে একসময় নিজস্ব সব চিন্তাধারা লোপ পায়। অনেকটা যন্ত্রের মতো বুলি কয়। এবং একসময় কানাইয়া বা ওমর খালিদের মতো বিষাক্ত কীটের জন্ম হয়। যারা, যুক্তি তথ্য বিচার বিবেচনার ঊর্ধ্বে। কেবল ধ্বংস, বিভাজন, রক্ত আর বিনাশপন্থী দর্শন বহন করে। 
   আর এই সমস্ত কাণ্ডই ঘটে যজন বা যাজনশীল না-হওয়ার জন্য। গোড়ায়ই গণ্ডগোল। এদের ধর্মগুরু মার্ক্স সাহেব তরুণ হেগেলপন্থী আর্নল্ড রুডের সাথে মিলে সংবাদপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মার্ক্সের চিন্তা অনুযায়ী পত্রিকার কর্তব্য হবে"প্রচলিত সমস্ত কিছুর নির্মম সমালোচনা।" সবকিছুর সমালোচনা করব?! মঙ্গলদায়ক, শুভকে নেব না? ভালোকে ভালো বলব না?!!! ভাবুন তো, বিষটির উৎস কতটা ভয়ংকর!! যে-দর্শন সব কিছুকেই নিগেটিভ চোখে দেখতে শেখায় সেটার অনুসারীরা কী ধরনের মানসিকতা বহন করবে~সেটা সহজেই অনুমেয়। 
   •••
    এই তো এবারে পশ্চিমবঙ্গে খাতাই খুলতে পারেনি এরা। ত্রিপুরা থেকে ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন। সারা ভারতে গুটিকতক বেঁচে আছে। কয়দিন আগে কলকাতার বিগ্রেডে লালদের সমাবেশ হলো। রথের রশি হাতে নেবার মতো নেতা নেই। কী করুণ দশা!! নাকে পাইপ, অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আনতে হলো, টেনেহিঁচড়ে অসুস্থ মানুষটাকে এনে ঝড় সামাল দেবার শেষ চেষ্টা। এমন অসুস্থ যে মঞ্চে পর্যন্ত তোলা যায়নি। পুরোনো অ্যামবেসেডর গাড়িতে তিনি বসে রইলেন কয়েক মিনিট। কী করুণ, কী করুণ অবস্থা!! 
     এই দেশে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের মূলে বামপন্থীদের অবদান কম নয়। কেননা~এদের কাণ্ডকারখানায়ই তিতিবিরক্ত মানুষ গেরুয়া শিবিরে বন্যার ঢলের মতো গড়িয়ে গেছেন। এইটুকু বোঝারও ক্ষমতা নেই এদের!!!
•••
   এই ভয়ানক পরিণতির পরও এরা আত্মসমীক্ষা করছে না। মানুষ কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, কেন ঘৃণা করছে সেটাও ভেবে দেখছে না। বরং সেই পুরনো গৎবাঁধা তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, কটুক্তি, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যএসব ফেনা ফেসবুকে উপচে পড়ছে। 
    আমার এক বন্ধু, একদা এসইউসি-র ফিকেলাল কমরেড, জানালনোটায় ভোট দিয়েছে। কারণ বিজেপিকে চালায় আম্বানি, আদানিরা। পুঁজিপতিরা। অমিত শাহর সম্পত্তি বেড়েছে কেন? আমি বললাম নিশ্চয়, সেটা তদন্ত হোক। কিন্তু সোনিয়ার চল্লিশ হাজার কোটির সম্পত্তি নিয়ে কিছু তো বল্। তখন চুপ। "ধর্মনিরপেক্ষ" দেশে "ধর্মীয় আইন" চলবে কেনচুপ। তোয়াজ তোষণ, তুষ্টিকরণ কেন চলবে~চুপ। জিনিসপত্রের দাম? চুপ। 
    এখন শব্দ ছুঁড়ছে এরা"হিন্দু ফ্যাসিস্ট"। এদের এইটুকু বুদ্ধি নেই যে ফ্যাসিজমের মতো জটিল তত্ত্ব সাধারণ মানুষ বোঝে না। ওইসব বস্তাপচা বুলি আওড়ে কার কতদিন কমরেড?!!
    নিজেদের ত্রুটি কোথায় আছে~সেটা না-দেখে, আত্মসমীক্ষা না-করে পরের ঘাড়ে তাত্ত্বিকভাবে দোষ চাপিয়ে নিজেরাই তো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল!! মচকাবে, তবু ভাঙবে না। নিজেদের অহং বাদ দেবে না। মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করবে না। জনচিত্ত জয় করার সেবামানসিকতার সংস্কার না থাকলে যা হয়। 
    সাধে কি আর বলি~"বামবিষ"!!!
•••


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.