মহিলা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চলালো বেসরকারি সংগঠন নর্থইস্ট নেটওয়ার্ক
দেবযানী পাটিকর, গুয়াহাটিঃ মহিলাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৬ দিনের প্রচার অভিযান চালালো নর্থইস্ট নেটওয়ার্ক (নেন) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। উদেশ্য, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতন ঠেকানো। লিঙ্গ বৈষম্য ও নারী নির্যাতন মানব অধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে জঘন্য রূপ। সমগ্র পৃথিবীতে তিনজন মাহিলার মধ্যে একজন লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতনের শিকার হয়। বিশ্বের লিংগ ব্যবধানের তথ্য অনুসারে ১৪২ টি দেশের ভিতরে ভারতের স্থান ১১৪। (ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম ২০১৪) ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ভারতে প্রতি তিন মিনিটে মহিলার বিরুদ্ধে একটি করে অপরাধ সংঘটিত হয়। মহিলার প্রতি হওয়া অপরাধের ক্ষেত্রে অসমের অবস্থান খুবই হতাশাজনক। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ২০১৬র তথ্য মতে নারী নির্যাতনে অসমের স্থান দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। অসমে মহিলারা সবচেয়ে বেশি স্বামীর দ্বারা অত্যাচারের শিকার হয়, অ্যাসিড আক্রমণ দ্বিতীয়, নারী সরবরাহের ক্ষেত্রে পঞ্চম এবং ধর্ষণের ক্ষেত্রে অষ্টম স্থানে রয়েছে, এছাড়া ডাইনি হত্যা,পারিবারিক নির্যাতন, গর্ভবস্থায় হওয়া নির্যাতন, যৌতুক জনিত নির্যাতন ও হত্যা এবং কর্মক্ষেত্রের যৌন নির্যাতনের হার দিনে দিনে ক্ৰমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। গত দুই মাস ধরে আমাদের দেশে সর্ব চর্চিত বিষয় হল মিটু আন্দোলন। ভারতীয় সিনেমা, বিনোদন, শিল্প এবং সংবাদ জগতে কাজ করা অনেক যুবতী ও মহিলারা কর্ম ক্ষেত্রে তাদের উপর হওয়া যৌন নির্যাতনের কথা খোলাখুলিভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। যার ফলে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে পদত্যাগও করতে হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে মহিলার উপর হওয়া যৌন নির্যাতন সমস্ত বিশ্বে এক বিশেষ চিন্তার বিষয়। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ করেছে যে বিশ্বের সমগ্র দেশে সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা অন্যান্য সমস্ত কর্মক্ষেত্রেই মহিলার উপর যৌন নির্যাতন চলে আসছে। নর্থ ইস্ট নেটওয়ার্ক এই লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৬ দিনের সক্রিয় প্রচার অভিযান চলিয়েছে। নেনের ২০১৮ সালে করা একটি সমীক্ষা মতে ৪১ শতাংশ মহিলা কর্মক্ষেত্রের যৌন নির্যাতনের শিকার বলে ধরা পড়েছে। লজ্জা, ভয়, সঙ্কোচ, বদনাম হওয়ার ভয় বা চাকরি হারানোর ভয়ে মহিলাদের নির্যাতনের কথা বলতে মুখ বন্ধ করে রাখতে হয়। যদি কোন মহিলা এর বিরুদ্ধে সরব হন তাহলে দোষটা মহিলার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বা তাদের চরিত্রের ওপর আঙ্গুল তোলা হয় কখনও কখনও পুলিশ অভিযোগ করলেও প্রভাবশালী নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে নিয়োগকর্তা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে না ফলে মহিলা কর্মচারীরা মর্যাদাপূর্ণ কর্মক্ষেত্র থেকে বঞ্চিত হন। ভারতে ২০১৩ সালে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উপর হওয়া যৌন নিৰ্যাতন প্রতিরোধ ও নিষিদ্ধকরণ এবং প্রতিকার আইন গৃহীত হয়। এই আইন প্রয়োগের ফলে মহিলাদের সুরক্ষিত এবং মর্যাদাপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। এতে কর্মক্ষেত্রের যৌন নির্যাতনের সংজ্ঞা বিচারপ্রক্রিয়া বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে এবং যুবতী কর্মচারীদেরও আইন সম্পূর্ণ জানাটা বিশেষভাবে জরুরি। নিজের অধিকার সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে আগে এগিয়ে আসতে লাগবে মহিলাদেরই। কৰ্মক্ষেত্ৰে সম্মান সহকারে কাজ করা প্ৰত্যেকজন মহিলার অধিকার রয়েছে। এই অভিযানে নর্থ ইস্ট নেটওয়ার্ক মহিলাদের সচেতনতার ওপর বিশেষ জোর দিযেছে। মহিলাদের মধ্যে সমাজ সচেতনতা গড়ে তোলাটা খুব প্রয়োজন। এই অভিযান অসমের ৭টি জেলায় চালানো হয়। গোলাঘাট ও শোণিতপুর জেলায় মহিলাদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে নাটক করা হয় যেখানে ১০০ জন মহিলা ও স্কুল ছাত্র ছাত্রীরা এই প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করেছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। এ প্রসঙ্গে ফেমিনিস্ট অ্যাক্টিভিস্ট মৃদুলা কলিতা বলেন- মহিলাদের ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে অত্যাচার হয়েই থাকে। তিনি আরও বলেন- গ্রামের মহিলারাও অত্যাচারের শিকার হন। তাদেরকে দাবিয়ে রাখা হয়, সেক্ষেত্রে সচেতনতা হওয়ার খুবই প্ৰয়োজন। নারী নির্যাতনের কাহিনী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু যন্ত্রনার তীব্রতা একই।
কোন মন্তব্য নেই