প্রয়াত হলেন পদ্মশ্রী নটবর ঠক্কর, সেইসঙ্গে একটি যুগের অবসান হল
আশীষ কুমার দে, হিলস্ বরো, নিউ জার্সি
প্রয়াত হলেন পদ্মশ্রী নটবর ঠক্কর উত্তর পূর্বাঞ্চলের গান্ধী নামে খ্যাত সমাজকর্মী । ৭ অক্টোবর সকাল ৭ টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। কিডনি সংক্রান্ত রোগে ভুগছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৬। রেখে গেলেন স্ত্রী লেটিনা, দুই কন্যা ও এক পুত্র ও অগণ্য গুনমুগ্ধ সহকর্মীদের। ১৯ সেপ্টেম্বর জটিল জ্বরে আক্রান্ত হন, তারপর তাঁকে স্থানান্তরিত কর হয় গুয়াহাটির অ্যাপোলো হাসপাতালে। নাম নটবর ঠক্কর হলেও তাঁর পরিচিতি ছিল নটবর ভাই নামেই । ৯ অক্টোবর ১৯৩২ সনে মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার দাহানুতে একটি গুজরাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ২৩ বছর বয়সে গান্ধীবাদী সমাজ সংস্কারক কাকা কেলকর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি ১৯৫৫ সালে নাগাল্যান্ড চলে আসেন । মোককচঙ জেলার চুচুইয়াংমাঙ গ্রামে গিয়ে তাঁর সমাজসেবা শুরু । সেই সময় নাগা বিদ্রোহী ও ভারতীয় সেনার মধ্যে গৃহ যুদ্ধ চরম সীমায়। নটবর ভাইকে ভারতীয় সেনার গুপ্তচর ভেবে কোনো গ্রামে আশ্রয় না দিতে নির্দেশ দেন নাগা বিদ্রোহীরা । স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে জনগণের মঙ্গল ও আবেগ কে কাজে লাগিয়ে তিনি চুচুইয়াংমাঙ গ্রামে স্থাপনা করেন নাগাল্যান্ড গান্ধী আশ্রম । তাঁর মুখে শোনা নাগাদের আস্থা অর্জন করতে এক বছর পরেই তিনি নাগা মহিলাকে বিবাহ করেন, তিনিও স্বামীর কর্মে নিজেকে সমর্পণ করেন । নাগা পুরুষ ও মহিলাদের স্বনির্ভর করতে তিনি মৌমাছি পালন, গুড় তৈরি, ঘানির তেল, বায়োগ্যাস, কার্পেন্টারি এবং তাঁত শিল্পের প্রশিক্ষণ দেন ও খাদি শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলেন। স্কুল ড্রপআউটদের জন্য ভোকেশন্যাল ট্রেনিং ও শারীরিক অন্যভাবে সক্ষমদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন । প্রথম জীবনে বহুবার নাগা বিদ্রোহীদের প্রানঘাতী আক্রমণের শিকার হন তিনি। রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয় তাঁকে। তা স্বত্তেও তিনি নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন । ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্বর্গীয় জওহরলাল নেহরু, নটবর ভাইকে নাগাল্যান্ড এ থেকে যেতে অনুরোধ করেন ও কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্যও করেন । নটবর ভাই তাঁর জীবনকালে সেনাবাহিনী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ও দীর্ঘ মেয়াদী শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টায় চুচুইয়াংমাঙ এ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন এর একটি শাখা স্থাপিত হয় ২০০৬ সালে। গ্রামবাসীরা ২৩২ একর জমি দান করেন নাগাল্যান্ডের গান্ধী আশ্রমকে, ‘মহাত্মা গান্ধী সেন্টার ফর সোস্যাল ওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোস্যাল সায়েন্স । নটবর ভাইয়ের সমাজ উন্নয়নের জন্য তাঁকে ১৯৮৭ সালে ‘জমুনালাল বাজাজ’ পুরস্কার, ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি দ্বারা পদ্মশ্রী, ১৯৯৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় সংহতি পুরষ্কার ও ২০১৫ সালে কর্মযোগী পুরষ্কার দেওয়া হয় । আমার সঙ্গে পরিচয় ১৯৯৭ সালে গুয়াহাটিতে একটি সেমিনারে অংশ নিতে গিয়ে, পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ডাঃ কুলেন্দু পাঠক, প্রাক্তন প্রাচার্য, ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়।এরপর উত্তর পূর্বাঞ্চলের একাধিক সেমিনার, কর্মশালা, আলোচনায় প্রায়ই দেখা হতো । ধেমাজী জেলার শিলাপথার গ্রামের, রবীন্দ্রনাথের 'রুরাল ভলান্টিয়ার সেন্টার' এর পরিচালক সমিতির সদস্য ছিলাম আমরা । ২০১৫ সালে ঘরোয়ার রজত জয়ন্তী উৎসবে তাঁকে নিমন্ত্ৰণ করতে গিয়েছিলাম, তাঁর ভোপালের একটি অনুষ্ঠানে পুর্বনির্ধারিত কর্মসূচী থাকায় আমাদের এখানে আসা হয়নি । ২০১৭ সালে আমাদের সদস্য পিঙ্কু দত্ত গিয়েছিলেন দেখা করতে সেই শেষ যোগাযোগ । এর পর ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল, লিমা জামির এর পাঠানো ম্যাসেজে জানতে পারলাম তাঁর মৃত্যুর খবর । হারালাম এক নিবেদিত প্রাণ সমাজসেবীকে । আজ তাঁর জন্মদিন।
প্রয়াত হলেন পদ্মশ্রী নটবর ঠক্কর উত্তর পূর্বাঞ্চলের গান্ধী নামে খ্যাত সমাজকর্মী । ৭ অক্টোবর সকাল ৭ টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। কিডনি সংক্রান্ত রোগে ভুগছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮৬। রেখে গেলেন স্ত্রী লেটিনা, দুই কন্যা ও এক পুত্র ও অগণ্য গুনমুগ্ধ সহকর্মীদের। ১৯ সেপ্টেম্বর জটিল জ্বরে আক্রান্ত হন, তারপর তাঁকে স্থানান্তরিত কর হয় গুয়াহাটির অ্যাপোলো হাসপাতালে। নাম নটবর ঠক্কর হলেও তাঁর পরিচিতি ছিল নটবর ভাই নামেই । ৯ অক্টোবর ১৯৩২ সনে মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার দাহানুতে একটি গুজরাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ২৩ বছর বয়সে গান্ধীবাদী সমাজ সংস্কারক কাকা কেলকর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি ১৯৫৫ সালে নাগাল্যান্ড চলে আসেন । মোককচঙ জেলার চুচুইয়াংমাঙ গ্রামে গিয়ে তাঁর সমাজসেবা শুরু । সেই সময় নাগা বিদ্রোহী ও ভারতীয় সেনার মধ্যে গৃহ যুদ্ধ চরম সীমায়। নটবর ভাইকে ভারতীয় সেনার গুপ্তচর ভেবে কোনো গ্রামে আশ্রয় না দিতে নির্দেশ দেন নাগা বিদ্রোহীরা । স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে জনগণের মঙ্গল ও আবেগ কে কাজে লাগিয়ে তিনি চুচুইয়াংমাঙ গ্রামে স্থাপনা করেন নাগাল্যান্ড গান্ধী আশ্রম । তাঁর মুখে শোনা নাগাদের আস্থা অর্জন করতে এক বছর পরেই তিনি নাগা মহিলাকে বিবাহ করেন, তিনিও স্বামীর কর্মে নিজেকে সমর্পণ করেন । নাগা পুরুষ ও মহিলাদের স্বনির্ভর করতে তিনি মৌমাছি পালন, গুড় তৈরি, ঘানির তেল, বায়োগ্যাস, কার্পেন্টারি এবং তাঁত শিল্পের প্রশিক্ষণ দেন ও খাদি শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলেন। স্কুল ড্রপআউটদের জন্য ভোকেশন্যাল ট্রেনিং ও শারীরিক অন্যভাবে সক্ষমদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন । প্রথম জীবনে বহুবার নাগা বিদ্রোহীদের প্রানঘাতী আক্রমণের শিকার হন তিনি। রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয় তাঁকে। তা স্বত্তেও তিনি নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন । ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্বর্গীয় জওহরলাল নেহরু, নটবর ভাইকে নাগাল্যান্ড এ থেকে যেতে অনুরোধ করেন ও কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্যও করেন । নটবর ভাই তাঁর জীবনকালে সেনাবাহিনী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ও দীর্ঘ মেয়াদী শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টায় চুচুইয়াংমাঙ এ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন এর একটি শাখা স্থাপিত হয় ২০০৬ সালে। গ্রামবাসীরা ২৩২ একর জমি দান করেন নাগাল্যান্ডের গান্ধী আশ্রমকে, ‘মহাত্মা গান্ধী সেন্টার ফর সোস্যাল ওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোস্যাল সায়েন্স । নটবর ভাইয়ের সমাজ উন্নয়নের জন্য তাঁকে ১৯৮৭ সালে ‘জমুনালাল বাজাজ’ পুরস্কার, ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি দ্বারা পদ্মশ্রী, ১৯৯৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় সংহতি পুরষ্কার ও ২০১৫ সালে কর্মযোগী পুরষ্কার দেওয়া হয় । আমার সঙ্গে পরিচয় ১৯৯৭ সালে গুয়াহাটিতে একটি সেমিনারে অংশ নিতে গিয়ে, পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ডাঃ কুলেন্দু পাঠক, প্রাক্তন প্রাচার্য, ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়।এরপর উত্তর পূর্বাঞ্চলের একাধিক সেমিনার, কর্মশালা, আলোচনায় প্রায়ই দেখা হতো । ধেমাজী জেলার শিলাপথার গ্রামের, রবীন্দ্রনাথের 'রুরাল ভলান্টিয়ার সেন্টার' এর পরিচালক সমিতির সদস্য ছিলাম আমরা । ২০১৫ সালে ঘরোয়ার রজত জয়ন্তী উৎসবে তাঁকে নিমন্ত্ৰণ করতে গিয়েছিলাম, তাঁর ভোপালের একটি অনুষ্ঠানে পুর্বনির্ধারিত কর্মসূচী থাকায় আমাদের এখানে আসা হয়নি । ২০১৭ সালে আমাদের সদস্য পিঙ্কু দত্ত গিয়েছিলেন দেখা করতে সেই শেষ যোগাযোগ । এর পর ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল, লিমা জামির এর পাঠানো ম্যাসেজে জানতে পারলাম তাঁর মৃত্যুর খবর । হারালাম এক নিবেদিত প্রাণ সমাজসেবীকে । আজ তাঁর জন্মদিন।
কোন মন্তব্য নেই