কলকাতার দুর্গাপুজা শিল্পে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়
নয়াঠাহর প্ৰতিবেদন, কলকাতাঃ কলকাতার সর্বজনীন বারোয়ারী দুর্গাপুজো শিল্পে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। ASSOCIATED CHAMBERS OF COMMERCE AND INDUSTRY OF INDIA (ASSOCHAM) সমীক্ষা করে জানিয়েছে – টাকার দাম কমে যাওয়া , মুদ্রাস্ফিতী, আর্থিক অবক্ষয় সত্বেও ব্যবসায়ী মহল দুর্গাপুজোয় ব্যবসা বাণিজ্যের বেশ বড়সড় টার্গেট রেখেছে । ২০১৫ সালে কলকাতা তথা বাঙ্গালির দুর্গাপুজোয় ৪০,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। প্রতি বছর এই ব্যবসা ৩৫% হারে বাড়ছে । ( West Bengal Durga Puja Industry is growing at a compound annual growth rate (CAGR) of about 35% ) প্যান্ডেল শিল্পে আনুমানিক ব্যয় হয় পাঁচশ কোটি টাকা । এই টাকাটা থিম পুজোর আর্টিস্ট, মজুর, শিল্পী ও কলাকুশলীদের হাতে যায়। প্লাই, বাঁশ, কাঠ, দড়ি, পেরেক, কাপড়, ফেভিকল, রঙ, কার্পেট তুলি চট, থার্মোকল, ত্রিপল, টিন, প্রভৃতি ব্যবসায়ীদের লক্ষ্মী লাভ হয় । তাদের কারখানার কর্মীদের মুখে হাসি ফোটে । তাদের পরিবারের লোকজন পুজোর আনন্দে মাততে পারে সবার সঙ্গে । যত বড় প্যান্ডেল হয়, যত খরচ করে উদ্যোক্তারা থিম পুজো করে, তত বেশি লোকের মধ্যে টাকাটা ভাগ হয়ে যায়, তত বেশি লোকের দুঃখ ঘোচে।অপব্যয় পন্থীরা এ দিকটা নিয়ে ভাবে না, পজিটিভ চিন্তা মনেই আনে না। দু-পাঁচশ হাভাতে"কে খাওয়ালে এই বিরাট জনসমষ্টি তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হত। প্রতি বছর কলকাতার আশেপাশে গড়ে কুড়ি ত্রিশ হাজার দুর্গাপুজা হয় । প্রতি বছরই উপকরণের দাম গড়ে ১৫% থেকে ২৫% বেড়ে যাচ্ছে । ফলে প্রতিমার দামও বেড়ে যাচ্ছে । বড় প্রতিমার দাম গড়ে ষাঠ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে । এই টাকাটাও ভাগ হয়ে যাচ্ছে খড়, বাঁশ, কাঠ, দড়ি, মাটি, কাপড়, রঙ, খড়িমাটি, শোলা, রাংতা, সাজের জিনিস, অস্ত্র বিক্রেতা, জরি, তুলি, গয়না, চুমকি বিক্রেতাদের মধ্যে। সমাজের সর্ব স্তরে সর্বজনীন বারোয়ারী পুজোর টাকা পৌঁছে যাচ্ছে সেই সব স্বল্পবিত্ত পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে । পুজোর আলোকসজ্জার খরচাও চলে যাচ্ছে সেই সব মানুষজনের কাছে যারা সারা বছর নিয়োজিত থাকছে অলংকরণ করার নানা আইডিয়া মাথায় নিয়ে । তথ্য ভারাক্রান্ত না করেও বলা যায় বাংলার দুর্গা পুজোর মহাব্যয়- অ্যাসোচ্যামের হিসেব মত চল্লিশ হাজার কোটি টাকা ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতের ঘরে ঘরে – পাঞ্জাব মুম্বাই গুজরাতে । এমন কি সুদুর চিন দেশেও। যে কোন রবিবারের খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখলেই মালুম হবে – কাপড় থেকে টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রো অভেন, গাড়ি, বাড়ি, গৃহ দ্রব্য প্রমুখের ব্যবসা পুজা সেল এর নামে কি রকম রমরমিয়ে চলছে । সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে বস্ত্র শিল্প।পুজোবাজারের সিংহভাগ দখল করে নিয়েছে বস্ত্র ব্যবসায়ীরা । স্বর্ণশিল্প এর পরে । এর পরে ভ্রমণ । একদল কলকাতা ছেড়ে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আবার নানান দেশবিদেশের মানুষজন পুজো উপলক্ষে কলকাতায় ভিড় জমায়। কলকাতায় দুর্গাপুজোর আয়োজন না হলে, কলকাতার পুজোর আকর্ষণ না থাকলে, পুজো উপলক্ষে শহর সেজে না উঠলে, কেই বা কলকাতায় আসতো ? পুজো হয় বলেই মানুষ জন আসে। অর্থাগম হয়। দোকান বাজার হোটেল রেস্টুরেন্ট চুটিয়ে ব্যবসা করে। আসোচেম সমীক্ষায় জানা যায় যে পুজোর বাজেটের টাকার সিংহভাগ সুরাত, গুজরাট, মহারাষ্ট্রের কাপড় মিল মালিকদের পকেটে যায় - পোশাকের জন্য ব্যয় হয় মোট পুজোর খরচের ৫২% , ফ্যাসন ও লাইফ স্টাইলের জন্য বরাদ্দ ৩২% , এবং বাইরে খানাপিনা বাবদ বাঙ্গালিরা আয়ের ২০% ব্যয় করে । শুনলে মাথা ঘুরে যাবে যে তথ্য জেনে, সেটি হল বাঙ্গালিরা দুর্গা পুজোর কদিন স্রেফ মদ খেয়েই ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা উড়িয়ে দেয় । এই সমীক্ষা করা হয়েছিল কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই,আমেদাবাদ, চন্ডীগড়, লখনৌ ও ইন্দোরে ২৪ থেকে ৩৪ বছর বয়স্ক যুবক এবং ৩৪ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে।সুতরাং দুর্গাপুজোর বিশাল খরচটা অপব্যয় নয় – সর্বভারতীয় ব্যবসা বাণিজ্যের বিনিয়োগ স্থল ।
কোন মন্তব্য নেই